বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক একটি সমস্যা হচ্ছে রক্তচাপ। প্রায় সকল শ্রেণির মানুষের এই ধরনের সমস্যায় ভূগে থাকেন। একজন মানুষের রক্ত চাপ এর পরিমাপ প্রেসার মেশিনের সাহায্যে পরিমাপ করা যায়। আর এই মেশিনগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি স্ফিগমোম্যানোমিটার এবং অন্যটি ডিজিটাল। বাংলাদেশের বাজারে ডিজিটাল ব্ল্যাড প্রেশার মেশিন এর দাম এখন অনেক কম। রক্ত চাপ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে এর মধ্যে একটি হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ আর অন্যটি নিম্ন রক্ত চাপ। রক্তচাপের প্রথম অংশটিকে বলে সিস্টলিক প্রেসার আর পরের অংশটিকে বলে ডায়াস্টলিক প্রেসার। উচ্চ রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা হচ্ছে ১২০/৮০ মিলিলিটার আর নিম্ন রক্তচাপের সর্বোচ্চ মাত্রা হচ্ছে ৯০/৬০ মিলিলিটার। এই দুই ধরনের রক্ত চাপই মানুষের সমস্যা সৃষ্টি করে। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যে কিভাবে রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখা যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়ঃ
উচ্চ রক্ত চাপের কারনে জীবন অনেক ধরনের বড় সমস্যা সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ হচ্ছে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির। এই সকল মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা। যেসকল অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিৎ তা হল-
সোডিয়াম যুক্ত খাবে পরিত্যাগ
খাবারের মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ যুক্ত আছে এমন খাবার সবচেয়ে বেশি পরিমানে খেয়ে থাকি। একজন সুস্থ মানুষের জন্য দিনে সর্বচ্চ ২,৩০০ মিলিগ্রাম লবণ গ্রহণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি লবণ গ্রহণ করার ফলে দ্রুত রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহণ করলে সেটি স্ট্রোকের কারণও হতে পারে।
নিয়মিত শাররিক ব্যায়াম
নিয়মিত শাররিক ব্যায়ামের ফলে শরীর ভালো থাকে এবং স্ট্রেস ও হাইপারটেনশ থেকে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করতে পারে। হাইপার টেনশন মানুষের শরীরের শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচলের গতি বৃদ্ধি করে। এর ফলে দেখা যায় যে মূহূর্তের ভিতরে রক্তের চাপ উচ্চ মাত্রায় পৌছে যায় এবং মারাত্মক আকারের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন
যে কোন ধরনের ধূমপান শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অ্যালকোহল ও নিকটিন পদার্থ বিদ্যমান এমন জিনিষ সেবন করার সাথে সাথে সাময়ীক সময়ের জন্য রক্তচাপের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রক্তের চাপ বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে রক্তনালীর ক্ষতি হতে পারে। তাই এই ধরনের বদভ্যাস থাকলে আজকে থেকে পরিহার করার চেষ্টা করুন।
পটাসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া
খাবারের মাধ্যেমে উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার রাখা উচিৎ। পটাশিয়াম মানুষের শরীরের পূষ্টির ঘাটতি কমায় এবং শরীরের মধ্যে সোডিয়ামের পরিমানে বেশি পরিমানে থাকলে সেটিকে কমাতে সাহায্য করে। পটাশিয়েম যুক্ত খাবারের মধ্যে শাকসবজি, ফল ও দুধ উল্লেখযোগ্য।
কোমল পানীয় পরিহার করা
প্রায় প্রত্যেক ধরনের কোল্ড ড্রিংস এর মধ্যে ব্যাপক পরিমানে কার্বোহাইড্রাইড, চিনি এবং চর্বি জাতীয় উপাদান থাকে। এই ধরনের সকল উপাদান শরীর মোটা করতে সাহায্য করে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
কার্বোহাইড্রেট কম খান
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কার্বস ও চিনি উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়। তাই কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার রক্তচাপের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। রুটি ও সাদা চিনির মতো খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এগুলো পরিমানমত খেতে হবে।
নিম্ন রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়ঃ
নিম্ন রক্ত চাপ শরীরের উপরের তেমন কোন মারাত্মক প্রভাব ফেলে না। এটি সাধারণত দেখা দেয় অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে নিম্ন রক্ত চাপের এখন পর্যন্ত সঠিক কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে নিম্ন রক্ত চাপ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এ ধরনের সমস্যায় যে সকল নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিৎ-
১। প্রতিদিন খাবার স্যালাইন অথবা গ্লুকোজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২। যারা নিয়মিত এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন তারা একই জায়গায় একটানা দীর্ঘ সময় থাকা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
৩। এক টানা দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে থাকলে উঠার সময় আস্তে আস্তে উঠা উচিৎ অন্যথায় সমস্যা হতে পারে।
৪। প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার (ডিম, মাছ, মাংস, ছানা, বাদাম, সবুজ শাক) খাওয়া উচিৎ।
৫। শরীরের মধ্যে লবনের ঘটতি থাকলে স্বভাবিক পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিৎ।
৬। পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা।
৭। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা।
সতর্কতাঃ রক্ত চাপের মাত্রা যদি খুব বেশি কিংবা কম হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যারা এমন সমস্যার সম্মূখীন হয়ে থাকেন তারা বিপি মেশিনের (ব্ল্যাড প্রেশার মেশিন) সাহায্যে পরিক্ষা করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: May 25, 2022