bdstall.com

বিভিন্ন সময়ে মহামারীর ইতিহাস

কোনো সংক্রামক রোগ যখন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর মাঝে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই রোগে অনেক মানুষ মারা যেতে থাকে তখনই সেই রোগকে মাহামারী বলা হয়। বর্তমানে ২০২০সালে নতুন করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এমন সংক্রামণ রোগের সূত্রপাত কিন্তু আজকের নয়।

 

প্রাচীন যুগে যে দিন থেকে মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা শুরু করেছে ঠিক তখন থেকেই মূলত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহামারী রোগের আবিরভাব ঘটেছে। সেই সকল মহামারী রোগে বিভিন্ন সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। মানুষ যত উন্নত হয়েছে, মহামারীর প্রাবল্য তত বেড়েছে; কারণ মানুষ উন্নত হওয়ার সাথে সাথেই গড়ে উঠেছে গ্রাম, পাড়া, মহল্লা ও শহর ফলে বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব।


চলুন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ের মহামারীর কিছু ইতিহাস ।

 

এপিডেমিক অব এথেন্স (৪৩০ খ্রিষ্টপূর্ব )       


খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে হওয়ায় এই মহামারী রোগটি নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ধারণা করা হয় এথেন্স রোগটি প্রধান লক্ষণ ছিল জ্বর, তক লালচে হয়ে যাওয়া ও ক্ষত সৃষ্টি হওয়া। সাধারণত এই সংক্রামক রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের সাথে অন্য ব্যক্তির স্পর্শে গেলেই ছড়াতো। বর্তমানে লিবিয়া, মিসর ও গ্রিস অঞ্চলে এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানেই অনেক লোক মারা গিয়েছিল। ঐ অঞ্চলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক মারা গিয়েছিল । অনেকে ধারণা করেন যে এটিই ছিল প্রথম টাইফয়েড জ্বর।

 

 

কুষ্ঠ (একাদশ শতাব্দী)


পৃথিবীতে কুষ্ঠ রোগের আবিরভাব অনেক আগে হলেও একাদশ শতাব্দীর দিকে ইউরোপে রোগটি মহামারীর আকার ধারণ করেছিল। এটি ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ ছিল। এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত রোগটি ছিল একটি প্রাণঘাতি রোগ । এখনো পৃথিবীতে বছরে লাখ লাখ মানুষ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়। তবে বর্তমানে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার এতে মৃত্যুর হার প্রায় শূণ্য।

 

 

দ্য ব্ল্যাক ডেথ ( ১৩৫০ সাল)


দ্য ব্ল্যাক ডেথ একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ ছিল। এটি সর্বপ্রথম এশিয়াতে দেখা দিলেও পরবর্তীতে এটি আমেরিকা ও ইউরোপে মহামারী আকারে ছড়ায়। তৎকালীন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গিয়েছিল এই রোগে আক্রান্ত হয়ে।

 

 

কলেরা (১৮১৭ সাল)


কলেরা একটি পানিবাহিত রোগ। সাধারণত দূষিত পানির মাধ্যমে এ রোগটি সংক্রমিত হয়। কলেরা সর্বপ্রথম দেখা দেয় রাশিয়াতে সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মারা যায় কলেরায় আক্রান্ত হয়ে। তারপর দূষিত পানির মাধ্যমে এটি পুরো ইউরোপ ও এশিয়াতে ছড়িয়ে পরে । শুধু মাত্র ভারতেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল কলেরায় আক্রান্ত হয়ে। এরপরও আরো কয়েক দফায় কলেরা মহামারী দেখা গিয়েছিল।

 

 

প্লেগ (১৮৬০ সাল)


প্লেগ রোগটি বেশ কয়েকবার পৃথিবীতে মহামারী আকারে দেখা গিয়েছিল । এর প্রথম সূত্রপাত হয়েছিল চীনের একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে। চীনের সাথে প্রায় সব দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক থাকায় প্রায় অনেকগুলো দেশে এই রোগটি সংক্রমিত হয়েছিল। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল ভারত । পুরো পৃথিবী জুড়ে পায় দেড় কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল এই রোগে সংক্রমিত হয়ে।

 

 

স্প্যানিশ ফ্লু ( ১৯১৮ সাল )


এই রোগের সঠিক উৎস না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয় এর উৎপত্তি স্থল ছিল চীন। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এতে সংক্রমিত হয়েছিল। প্রায় ৫কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল ।

 

 

এইচআইভি/এইডস ( ১৯৮১ সাল)


এটি একটি ভাইরাস বাহিত রোগ। ধারনা করা হয় এই ভাইরাসে উৎপত্তি স্থল পশ্চিম আফ্রিকা। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এখনো পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে প্রায় সাড়ে ৩কোটিরও বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গিয়েছে। তবে এটি অন্য সব ভাইরাসের মত এত সহজে ছড়ায় না।
 

 

কোভিড -১৯ ( ২০২০ সাল )
 

এটিও একটি ভাইরাস বাহিত নিমোনিয়াজাতীয় রোগ। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চিনের উথান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। এখনো পর্যন্ত প্রায় ১৮০ টিরও বেশি দেশে এটি ছড়িয়ে পরেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৫লক্ষেরও অধিক । এখনো পর্যন্ত এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ হাজরেরও অধিক মানুষ।

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: March 31, 2020
Reviews (0) Write a Review