bdstall.com

ফায়ার এক্সটিংগুইশার সত্যি কি আগুন নেভাতে পারে?

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায়। যেহেতু আগুন দাহ্য পদার্থ তাই নিজে জ্বলে ও অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। যেহেতু আগুনের দূর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়ে। তাই আগুনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার এর বিকল্প নেই। তাই নিরাপত্তা জোরদারের জন্য প্রত্যেক অফিস, বাসাবাড়ি, কিংবা কল-কারখানায় এক্সটিংগুইসার রাখা জরুরী। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র কম দামে ফায়ার এক্সটিংগুইশার পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ফায়ার এক্সটিংগুইসারের ধরণ ও কাজ সম্পর্কেঃ-  


ফায়ার এক্সটিংগুইসার কি ? 


ফায়ার এক্সটিংগুইসার হচ্ছে আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র। ইমারেজেন্সি আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র। ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট, গ্যাসের লিকেজ, ও ফ্রিজের কম্প্রেসার থেকে অথবা বিভিন্ন অসতর্কতার কারনে বাসা-বাড়িতে, অফিসে, ও কল-কারখানায় আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সব ধরনের আগুন নিভাতে একই রকমের ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করা হয় না। আগুনে ধরণ ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের ফায়ার এক্সটিংগুইসারের ব্যবহার করা হয়।

 

ফায়ার এক্সটিংগুসারের ধরণঃ

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ৪ ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসার পাওয়া যায়। এই ফায়ার এক্সটিংগুইসার গুলো হচ্ছেঃ

 

পানি টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসারঃ 

পানি টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসার আমাদের দেশে সচরাচর কম দামে পাওয়া যায়। পানি টাইপের এক্সটিংগুইসার প্রধানত কাগজ, কাঠ কিংবা আসবাবপত্রের আগুনে নেভাতে সক্ষম। এ ধরনের এক্সটিংগুইসার কে চেনার জন্য বোতলের গায়ে লাল রঙ দিয়ে ‘ওয়াটার’ লেখা থাকে। আগুনকে নমনীয় করে নেভাতে সাহায্য করাই এই ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসারের কাজ। 


ফোম টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসারঃ 

প্রধানত তেল, কাঠ, কাগজের আগুণ নেভাতে ফোম টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে শতকরা ৯৫ থেকে ৯৭ ভাগ পানির সাথে ৩ থেকে ৫ ভাগ একুয়াস ফিল্ম ফরমিং ফোম (AFFF) সল্যুশন যুক্ত করে ফোম ফায়ার এক্সটিংগুইসার তৈরী করা হয়। ফোম টাইপের ফায়ার এক্সটিংগুইসার মূলত ‘স্মোদারিং’ পদ্ধতিতে  আগুনে অক্সিজেনের পরিমান কমিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আগুন নেভাতে সাহায্য করে। এ ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসারের বোতলের গায়ে ক্রীম কালারে ‘ফোম’ লেখা থাকে। 


গ্যাস টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসারঃ

কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে প্রচন্ড চাপে বোতল জাত করে গ্যাস টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসার তৈরী করা হয়। এ ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসার বোতল অন্যান্য ফায়ার এক্সটিংগুইসার থেকে আকারে বড় হয় এবং বোতলের মাথা হর্ন লাগানো থাকে যা দেখে সহজেই চেনা যায়। গ্যাস টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রধানত বৈদ্যুতিক আগুন নেভানোর জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।  পাশাপাশি পেট্রোল, কেরোসিনে আগুন লাগলে নেভাতে সহায়তা করে। এই ধরনের এক্সটিংগুইসারের বোতলের গায়ে কালো রঙে "CARBON-DI-OXICIDE (CO2)" লেখা থাকে। 


পাউডার / এ.বি.সি টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসারঃ

পাউডার ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রধানত ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার দিয়ে তৈরী করা হয়। তবে এ ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসারে দুই ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, একটি হচ্ছে সোডিয়াম বাই কার্বোনেট মিশ্রিত পাউডার অন্যটি হচ্ছে মনো অ্যামোনিয়াম ফসফেট মিশ্রিত পাউডার। সোডিয়াম বাই  কার্বোনেটের চেয়ে অ্যামোনিয়াম ফসফেটের আগুন নেভানোর সক্ষমতা বেশি। এ ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসার কেমিক্যাল থেকে লাগা আগুনের পাশাপাশি যেকোনো ধরনের আগুন নেভাতে সক্ষম। কারণ আগুন লাগা স্থানে পাউডার স্প্রে করলে গুড়া গুলো আগুনে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ করে দেয় এবং আগুনে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে আগুন নিভিয়ে ফেলে। তাই এ ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইসার কে এবিসি টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসারও বলা হয়। পাউডার টাইপের ফায়ার এক্সটিংগুইসারের বোতলের গায়ে কে নীল কালারের রঙ দিয়ে “POWDER” লেখা থাকে।  

 

ফায়ার এক্সটিংগুইসার মেইন্ট্যানেন্সঃ

ফায়ার এক্সটিংগুইসার কেনার পর শুধু প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য জমা করে রাখলেই হবে না এগুলা নির্দিষ্ট সময় পর পর মেইন্ট্যানেন্সের প্রয়োজন রয়েছে।

  • উপাদানের ভিন্নতার জন্য ফায়ার এক্সটিংগুইসারের একটা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী মেয়াদ থাকে। সে মেয়াদ এর মধ্যে ব্যবহার না হলে পরবর্তিতে নতুন করে রিফিল করতে হবে।  
  • স্টোরে রাখা অবস্থায় ফায়ার এক্সটিংগুইসারের ভেতরের উপাদান যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হব। 
  • প্রত্যেক তিন বছর পর পর ফায়ার এক্সটিংগুইসারের হাইড্রোলিক প্রেসার ঠিক আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। 
  • তবে পানি টাইপ ফায়ার এক্সটিংগুইসার ১ বছর, ফোম ফায়ার এক্সটিংগুইসার ২ বছর এবং পাউডার ফায়ার এক্সটিংগুইসার ৫ বছর পর রিফিল করতে হবে। 
  • কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের ফায়ার এক্সটিংগুইসারের লাইফটাইম সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 

ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহারে সতর্কতাঃ  

আগুন লাগা স্থানের কাছাকাছি অবস্থানে থেকে ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করতে হবে।

  • মানুষের গায়ে সরাসরি ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করা যাবে না।   
  • ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহারের পূর্বে বাতাস প্রবাহের দিক বিবেচনা করে সে দিকে স্প্রে করতে হবে।   
  • কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস মিশ্রিত ফায়ার এক্সটিংগুইসার ছোট রুমের মধ্যে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কম জায়গায় ব্যবহার করলে ব্যবহারকারী মৃত্যু ঝুঁকিতে পরতে পারে। 
  • কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহারে ডিসচার্জ হর্ন সাবধানে ধরে ব্যবহার করতে হবে
  • ক্যামিকেল পাউডার মিশ্রিত ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহারে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে যেন শরীরে প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: March 18, 2023
Reviews (0) Write a Review