বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার তদন্তে সিসি ক্যামেরার ভূমিকা ক্রমেই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে এই নিয়ে সচেতনতা। অনেকেই এখন নিজের বাড়ি বা অফিসের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বেছে নিচ্ছেন সিসি ক্যামেরাকে। বাড়ছে সিসিটিভি ক্যামেরার বিক্রিও। ইতিমধ্যেই বড় আবাসনগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সিসিটিভি ও অ্যালার্ম বসা হিড়িক পড়েছে। ফ্ল্যাট, দোকান হোক বা সাইবার ক্যাফে, নজরদারি চালাতে সিসিটিভি-র জুড়ি নেই। বর্তমান সময়ে ঢাকার মার্কেটগুলোতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার বিক্রি। বাংলাদেশে ন্যূনতম ১,১০০ টাকা খরচ করলেই পাওয়া যায় সিসিটিভি ক্যামেরা। টিভি বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সঙ্গে যার সংযোগ ঘটিয়ে নজরদারি চালানো যায় ইচ্ছামতো জায়গা থেকে। সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি যদি ধরে রাখতে হয়, তবে তার জন্য রয়েছে আলাদা রেকর্ডিং ব্যবস্থা।
সিসিটিভি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে?
বাসার নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত বেশিরভাগ সিসিটিভি বা ক্লোজড্ সার্কিট টিভি ক্যামেরাগুলো হচ্ছে সলিড-স্টেট ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যা একটি সেন্ট্রাল রেকর্ডারের সাথে সংযুক্ত থাকে। কাজেই একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে এটি সম্প্রচার করে এবং একারনেই একে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বলা হয়।
কোন ধরনের সিসি ক্যামেরা কিনবেন?
বুলেট ক্যামেরা: এই ক্যামেরাগুলো দেখতে বুলেট আকৃতির এবং ইনডোর এবং আউটডোরে ব্যবহারের উপযুক্ত।
ডোম ক্যামেরা: ডোম ক্যামেরা আকারে ছোট হয় এবং ইনডোর ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে ভাল। এই ক্যামেরাগুলো কোন দিকে পয়েন্ট করে থাকে তা বোঝা বেশ কঠিন।
৩৬০ ডিগ্রী: ৩৬০ ডিগ্রী ক্যামেরা এগুলো সবদিক দিয়ে ভিডিও ধারণ করতে পারে।
পিটিজেড ক্যামেরা: এই পিটিজেড ক্যামেরা প্রয়োজনমত ডানে, বামে, উপরে, নিচে ঘুরান যায় এবং লেন্সের সাহায্যে জুম করা যায়। ফলে একাধিক ক্যামেরার প্রয়োজন হয় না।
মিনি ক্যামেরা: এগুলো আকারে ছোট হয় এবং ব্যাটারিতে চলে।
সিসি ক্যামেরা দিয়ে কতদূর রেকর্ড করা যায়?
বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা ২.৮ মিমি লেন্সের সাথে আসে যা ১০ ফুট পর্যন্ত ভালভাবে রেকর্ড করতে পারে এবং যত বেশি দূরত্ব হবে তত কম পরিষ্কার হবে। অন্যদিকে ৩.৮ মিমি লেন্স সহজেই ২০ ফুট পর্যন্ত রেকর্ড করতে পারে। তবে রাতে এর দূরত্ব আরও কম হবে।
লেন্স | দূরত্ব |
---|
২.৮ মিমি | ১০ ফিট |
৩.৬ মিমি | ২০ ফিট |
৫ মিমি | ৩০ ফিট |
৬ মিমি | ৩৫ ফিট |
৮ মিমি | ৪০ ফিট |
১২ মিমি | ৫০ ফিট |
২২ মিমি | ৮০ ফিট |
৫০ মিমি | ২৩০ ফিট |
কিভাবে ক্যামেরা কানেক্ট করা যায়?
কক্সিয়াল ক্যাবল: এই ক্যামেরাগুলো বাংলাদেশে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং দামে বেশ সস্তা। ডিশ বা কক্সিয়াল ক্যাবল দিয়ে এগুলো কানেক্ট করা যায়।
ইন্টারনেট ক্যাবল: এগুলোকে আইপি ক্যামেরা বলে এবং বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করছে কারন ইন্টারনেট ক্যাবল দিয়ে সহজেই কানেক্ট করা যায়।
ওয়াইফাই: কিছু আইপি ক্যামেরাতে ওয়াইফাই থাকে এবং কোন ধরনের তারের প্রয়োজন হয় না তবে গুরুত্তপুর্ন স্থাপনায় ব্যবহার না করাই ভাল কারন রেকর্ডিংয়ের জন্য তারের সংযোগ সবচেয়ে উত্তম।
কিভাবে তথ্য ধারণ করা যাবে?
এই ক্যামেরাগুলোর জন্য একটি ভিডিও রেকর্ডার লাগবে এবং যে কয়টি ক্যামেরা একসাথে প্রয়োজন কমপক্ষে সেই কয়টি চ্যানেলের রেকর্ডার কিনতে হবে। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটু বেশি চ্যানেলের কেনাই ভাল। আর কিছু কম বাজেটের সিসি ক্যামেরা আছে যেগুলো নিজেরাই তথ্য ধারণ করতে সক্ষম। ছোট দোকান বা বাসার জন্য এগুলোই যথেষ্ট।
আইআর কী?
ইনফ্রারেড ভিউকে আইএর বলে এবং অন্ধকারে সাদা-কালো ভিডিও ধারণ করতে পারে। তবে বর্তমানে কিছু সিসি ক্যামেরা কম আলোতেও ফুল কালার ধারণ করতে পারে।
দূর থেকে কিভাবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি করা যায়?
আইপি ক্যামেরা কিনতে হবে এবং সহজেই ইন্টারনেট দিয়ে যেকোন স্থান থেকে লাইভ ভিডিও অথবা রেকর্ডিং দেখতে পারবেন।
সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে আর যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে?
- সঠিক লেন্স নির্বাচন করা- লেন্সের কাজ হচ্ছে সেন্সরের জন্য আলো সংগ্রহ করা। ব্যবহারকারী যা কিছু দেখে বা ডিভিআর এ যা কিছু রেকর্ড হয় সবই লেন্স মারফত হয়। কতটুকু দূরত্বে একটি গাড়ির নাম্বার প্লেট পরা যাবে ও কারও চেহারা চেনা যাবে যা লেন্স নির্ণয় করে কারন লেন্স ফোকাস নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক ক্ষেত্রে হায়ার আউটপুট রেজোলিউশানের চেয়ে লেন্স বেশি কার্যকরী কারন আউটপুট সবসময় ইনপুট দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং লেন্স হচ্ছে ইনপুট সিস্টেম। তাছাড়া বাজারে জুম লেন্সও পাওয়া যায়। কিছু কিছু সিসিটিভি ক্যামেরাতে ডিজিটাল জুম এবং বাকিগুলোতে অপটিক্যাল জুম আছে যা লেন্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ক্রেতার যথাসম্ভব অপটিক্যাল জুমকে ডিজিটাল জুমের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। ডিজিটাল জুমের সমস্যা হচ্ছে এটি মূল ইমেজের সাথে কোনও তত্ত্ব যোগ করতে পারেনা।
- সঠিক সেন্সর নির্বাচন করা- সব ধরনের ডিজিটাল সেন্সর এক রকম হয়না। সিসিটিভি ক্যামেরার সেন্সরের স্পেসিফিকেশন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ২টি জিনিস বিবেচনা করতে হয়, তা হল সেন্সর টাইপ ও সেন্সর সাইজ। বেশিভাগ সেন্সর হয় সিএমওএস নয় সিসিডি। সিএমওএসের কর্মক্ষমতা ও সংবেদনশীলতা দুটোই সিসিডি থেকে অপেক্ষাকৃত কম। যার ফলে এটি পরিষ্কার ইমেজ ধারন করতে পারেনা। তাই পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সিএমওএস ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে সিএমওএসের সুবিধা হচ্ছে এর মূল্য সিসিডি থেকে কম। পরিষ্কার ইমেজ ধারনের জন্য সিএমওএস ভিত্তিক সেন্সরের অনেক বেশি সিগনাল প্রসেস করতে হয়। সেন্সরের সাইজ যত বড় হয় ততবেশি লাইট প্রসেস ও উন্নতমানের ইমেজ ধারন করতে পারে। বেশিভাগ সেন্সরের সাইজ ১/৪ ইঞ্চি বা ১/৩ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ১/৪ ইঞ্চি দ্বারা ৩.২ বাই ২.৪৪ এমএম এবং ১/৩ ইঞ্চি দ্বারা ৪.৮ বাই ৩.৬ এমএম পরিমাপ করা যায়। বড় সেন্সর শুধু ব্যাপক লাইটই ধারন করেনা, ডিএসপিকে কাজ করার জন্য অতিরিক্ত তথ্য দেয় যা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন বাজেট ক্যামেরাগুলোর জন্য সহায়ক।
- সঠিক আউটপুট রেজোলিউশান নির্বাচন করা- সিসিটিভি ক্যামেরার একটি প্রচলিত স্পেসিফিকেশন হচ্ছে টিভি রেজোলিউশানের সমতল লাইনের সংখ্যা বা টিভিএল। এর রেঞ্জ ৭০০টিভিএল পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৩৮০টিভিএল ও ৫৪০টিভিএলেরও বিভিন্ন ক্যামেরা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা ৪২০টিভিএলকে সর্বনিম্ন হিসেবে ধরলেও সবক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। আইটপুট নির্ভর করে ইনপুটের উপর। তাই লেন্স এবং সেন্সর যদি আউটপুট রেজোলিউশানের (ডিএসপি দ্বারা নির্ধারিত) সাথে ম্যাচ করতে না পারে তাহলে অতিরিক্ত রেজোলিউশানের পুরোটাই বৃথা যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণ রেজোলিউশান থাকা যা দ্বারা ক্যামেরায় ধারণকৃত ইমেজ স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করা যায়।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: May 01, 2023