বাজারে যেসব ডিজিটাল ক্যামেরা পাওয়া যায় তা মুলত দুটো ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে পয়েন্ট-এন্ড-শুট এবং অপরটি হচ্ছে ডিএসএলআর (ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেকশন)। আর এর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হচ্ছে পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরা। জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্যামেরার দামও চলে এসেছে মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার মধ্যে। বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরা এখন ৮-৯ হাজার টাকাতেও পাওয়া যায়। আর এসব ক্যামেরাতে অল্প দক্ষতায় বা প্রায় বিনা দক্ষতায় তাক লগানো সব ছবি তোলা সম্ভব। দক্ষ ফটোগ্রাফাররা অবশ্য ডিজিটাল এসএলআর-ই পছন্দ করবেন, কারণ সেখানে নিজের দক্ষতাটা জাহির করার সুযোগ রয়েছে। পয়েন্ট এন্ড শুট হচ্ছে মূলত শৌখিন ফটোগ্রাফার বা সাধারন ব্যবহারকারীদের জন্য আর এসএলআর হচ্ছে সিরিয়াস ফটোগ্রাফারদের জন্য উপযোগী। পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরায় প্রায় সব ফটোগ্রাফিক সেটিংসই ক্যামেরা নিজের বুদ্ধিমত্তার সাহায্যেই সম্পন্ন করে। অর্থাত ফোকাস, এক্সপোজার টাইম/শাটার স্পিড, অ্যাপারচার, আইএসও (সেনসিটিভিটি) ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্যামেরা নিজেই হ্যান্ডেল করে। তাই ব্যবহারকারীর এ বিষয়ে পারদর্শিতা না থাকলেও সমস্যা হয় না। অন্যদিকে এসএলআর-ক্যামেরায় সবগুলো সেটিংসই ম্যানুয়ালি সেট করার সুযোগ রয়েছে। কিন' তারপরও এসএলআর ক্যামেরাতেও অনেক ফটোগ্রাফারই অটো ফোকাস ব্যবহার করে থাকেন, কারণ অটো ফোকাস বা স্বয়ংক্রিয় ফোকাস প্রযুক্তিটি এখন এতটাই উন্নত হয়ে উঠেছে যে অনেক সময় ফটোগ্রাফার নিজের চেয়ে এটির ওপর বেশি নির্ভর করেন।
ডিজিটাল ক্যামেরার মূল্য তালিকা
ডিএসএলআরের মূল্য তালিকা
ঢাকাতে এখন বিশ্বের সেরা সব ব্র্যান্ডের ক্যামেরাই পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে ক্যানন, নাইকন, সনি, অলিম্পাস, কোডাক, স্যামসাংসহ অসংখ্য ব্র্যান্ড।
ক্যাননের রয়েছে দুধরনের পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরা। একটি হচ্ছে পাওয়ার শট সিরিজ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইকসাস সিরিজ। দ্বিতীয়টি আল্ট্রা-স্লিম ডিজাইনের তবে এর দাম প্রথম শ্রেণীটির চেয়ে কিছুটা বেশি। এছাড়া তাদের রয়েছে বিশ্বখ্যাত ডিএসএলআর ইওএস সিরিজের ক্যামেরা। ডিএসএলআর ক্ষেত্রটিতে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে নাইকন। অবশ্য পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার ড়্গেত্রে সনি এবং নাইকন উভয়ের সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে তাদের। এছাড়া সেমিএসএলআর লেভেলেও সনি, প্যানাসনিক এবং কোডাকের কয়েকটি মডেল পাওয়া যায়।
সনির পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা হচ্ছে সাইবার শট সিরিজ। এ ক্যামেরাগুলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। সনি তাদের এ ক্যামেরায় ব্যবহার করেছে বিশ্ববিখ্যাত লেন্স নির্মাতা কার্ল জেয়িসের তৈরি লেন্স। এছাড়া বাজারে রয়েছে তাদের ডিএসএলআর সিরিজের ক্যামেরা আলফা ডিএসএলআর। তবে ডিএসএলআরের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড দুটো হচ্ছে ক্যানন এবং নাইকন। অবশ্য নাইকনের লেন্সের দাম ক্যাননের তুলনায় কম। কিন্তু সার্বিকভাবে ফটোগ্রাফারদের পছন্দের তালিকায় ক্যাননের ঊর্ধ্বগতি সহজেই লক্ষণীয়।
আসুন জেনে নেই কোন ধরনের ক্যামেরা আপনার প্রয়োজনঃ
১। মেগাপিক্সেলেরঃ কোন ধরনের ক্যামেরা নেবেন সেটি ঠিক করা হলেই অবশ্যম্ভাবী যে প্রশ্নটি মনে আসবে সেটি হল কতো মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা নেবেন। আজকাল 'মেগাপিক্সেল' কথাটা আমরা খুব শুনি। যেকোনো ডিজিটাল ছবি তৈরী হয় অসংখ্য ছোট ছোট রঙীন চতুষ্কোন আকারের পার্টিকেল দিয়ে। এইগুলিকেই পিক্সেল বলা হয়। হাতের কাছে যেকোনো ডিজিটাল ছবিকে বড় করতে থাকলে এই চতুষ্কোনগুলিকে দেখতে পাবেন। এমন ১ মিলিয়ন পিক্সেল দিয়ে হয় ১ মেগাপিক্সেল। ১ মিলিয়ন = ১০ লাখ। ৫ মিলিয়ন পিক্সেল হচ্ছে ৫ মেগাপিক্সেল। বাকিটা অনেকেই আমরা জানি/শুনি, যেমন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা কতো মেগাপিক্সেল, ডিজিটাল ক্যামেরা কতো পিক্সেল এইসব আমরা শুনি/দেখি বিজ্ঞাপনে। গ্রহণযোগ্য মানের এবং পরিষ্কার ছবি পাবেন ২/৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে। কিন্তু আপনি কতো মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা নেবেন? এটা নির্ভর করবে ছবি প্রিন্ট করবেন, নাকি বড় স্ক্রিনে দেখার জন্য এবং ইমেইলে অন্যান্যদেরকে পাঠানোর জন্য। ১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ছবি ইমেইল, ব্লগ, ওয়েবসাইট ও সিডি/ডিভিডি'তে ছবির কালেকশানের জন্য যথেষ্ট। ৪"x৬" প্রিন্ট নেওয়ার জন্য ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ভালো হবে। ৫"x৭" ছবি প্রিন্টের জন্য ৩/৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা উপযুক্ত হবে। এইভাবে ৮x১০ ছবির জন্য ৫ মেগাপিক্সেল, ১১x১৪ ছবির জন্য ৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা নেওয়াই যথেষ্ট।
২। ছবির মানঃ ডিএসএলআর ক্যামেরাতে ইমেজ সেন্সর বৃহত্তর হওয়ায় পিক্সেল সাইজও বৃহত্তর হয় এবং ক্যামেরাটিকে অপেক্ষাকৃত দ্রুত আইএসওতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ফলে শাটার স্পীড ও দ্রুত হয় এবং গ্রেইনের পরিমাণ কমে যায়। ডিএসএলআর ক্যামেরাতে আরও আছে বিল্ট-ইন নয়েস-রিডাকশন ক্যাপাবিলিটি। আর ডিজিটাল ক্যামেরায় দিনের আলোয় ভাল মানের ছবি তোলা যায় কিন্তু রাত্রে মোটামুটি মানের ছবি উঠে।
৩। অভিযোজন-প্রবণতাঃ ডিএসএলআর ক্যামেরার লেন্স পরিবর্তনের ক্ষমতা ফটোগ্রাফারদের অফুরন্ত সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। অনেক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেন্স যেমন ওয়াইড এঙ্গেল বা সুপার লং ফোকাল লেংথ লেন্স ডিএসএলআর ক্যামেরায় লাগানো যায়। এছাড়াও আরও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ডিএসএলআর ক্যামেরায় ব্যবহার করা যায়। এটি লক্ষণীয় যে মানের বৈচিত্রে লেন্স বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। লেন্সের কোয়ালিটি ইমেজ কোয়ালিটির উপর ব্যপক প্রভাব ফেলে। আরে সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরার লেন্স পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই।
৮। গতিঃ স্টার্ট আপ, ফোকাসিং ও শাটার ল্যাগের দিক থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরার গতি অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি হয়। কিন্তু পয়েন্ট এবং শুট ক্যামেরায় আস্তে কাজ করে।
৫। অপটিক্যাল ভিউফাইন্ডারঃ রিফ্লেক্স মিররের কারনে ডিএসএলআর ক্যামেরা আদর্শ ছবি ধারন করতে পারে। আর ডিজিটাল ক্যামেরায় শুধু এলসিডি থাকে তাই ছবির মান মোটামুটি হয়।
৬। বৃহত্তর আইএসও রেঞ্জঃ যদিও ক্যামেরার মান ভেদে আইএসও রেঞ্জ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে তবুও সাধারণত ডিএসআলআর ক্যামেরা বিস্তৃত আকারে আইএসও রেঞ্জ প্রদান করে যার সাহায্যে বিভিন্ন পরিবেশে সহজেই ছবি তোলা যায়।
৭। ম্যানুয়াল কনট্রোলঃ ডিএসএলআর ক্যামেরা এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছামতো ক্যামেরার বিভিন্ন সেটিংস্ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদিও এতে অটো মোড রয়েছে কিন্তু একজন ভালো ফটোগ্রাফার সবসময়ই আশা করেন ক্যামেরার সেটিংস্ যাতে তার নিয়ন্ত্রণেই থাকে। পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরায় প্রায় সব ফটোগ্রাফিক সেটিংসই ক্যামেরা নিজের বুদ্ধিমত্তার সাহায্যেই সম্পন্ন করে। অর্থাত ফোকাস, এক্সপোজার টাইম/শাটার স্পিড, অ্যাপারচার, আইএসও (সেনসিটিভিটি) ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্যামেরা নিজেই হ্যান্ডেল করে। তাই ব্যবহারকারীর এ বিষয়ে পারদর্শিতা না থাকলেও সমস্যা হয় না।
৮। রিটেইনিং ভ্যালুঃ বলা হয়ে থাকে যে ডিএসএলআর ক্যামেরার মান পয়েন্ট ও শুট ক্যামেরার চেয়ে বেশি কারন ডিএসএলআর ক্যামেরার মডেল পয়েন্ট ও শুট ক্যামেরার মতো এত দ্রুত আপগ্রেড হয়না। তাছাড়াও এই ক্যামেরার লেন্স বিভিন্ন মডেলের ডিএসএলআর ক্যামেরায় ব্যবহার করা যায়। ক্যামেরার মডেল পরিবর্তন করে ভবিষ্যতে যদি আপগ্রেড করতে হয় তখন লেন্স নিয়ে কোনও সমস্যা হয়না।
এছাড়া ক্যামেরা বিষয়ক কিছু টিপস একনজরে-
- এর পরেই যে প্রধান বিষয়টি সকলের মনে এসে যাবে সেটা হচ্ছে কতোখানি ধারনক্ষমতার মেমোরী কার্ড কিনবেন। সাধারনত ক্যামেরার সাথেই একটি কার্ড দেয়। আমার ১০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সাথে ১টি ১জিবি কার্ড পেয়েছিলাম, নিজে একটি ২জিবি কার্ড কিনে নিয়েছিলাম। ১০ মেগাপিক্সেল সেটিংসে ১জিবি কার্ডে আমি ৬৯৩-টি ছবি রাখতে পারি কার্ডে। এই অনুপাতে আন্দাজ করে নিন বাকিটা।
- এখনকার দিনে একটি ক্যামেরা ন্যূনতম ৮ মেগাপিক্সেলের হওয়া উচিত।
- লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির চার্জ স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই যে ক্যামেরাটি কিনবেন সেটির ব্যাটারিটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি হলেই ভাল হয়।
- ক্যানন, নাইকন, সনি, অলিম্পাস-এ ধরনের প্রথম সারির ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কেনা অনেক দিক থেকেই নিরাপদ। সাধারণত এসব নির্মাতার লেন্সের মান এবং সেন্সর যথেষ্ট উন্নত হয়।
- ক্যামেরা কত আইএসও পর্যন্ত সাপোর্ট করে তা পরীক্ষা করুন, কারণ কম আলোতে ছবি তুলতে এটা প্রয়োজন হবে।
- ক্যামেরাটি কতটুকু পর্যন্ত মেমোরি সাপোর্ট করে তা যাচাই করুন। কারণ যত বেশি ধারণক্ষমতার মেমোরি যুক্ত করা যাবে ততবেশি ছবি তোলা সম্ভব হবে।
- পন্যের নির্মাতার প্রকৃত পরিবেশক বা এজেন্টের কাছ থেকে পন্যটি কেনা বেশি নিরাপদ। সেক্ষেত্রে এর সার্ভিস এবং ওয়ারেন্টি সেবাটি নিশ্চিত হয় এবং আপনার পন্যটি যে নকল নয় সেটিও নিশ্চিত হয়।
- ইমেজ সেন্সরের ওপর ছবির মান নির্ভর করে। সেন্সরের আকার যত বড় হবে, ছবির মান তত ভালো হবে। ডিজিটাল ক্যামেরায় দুই ধরনের ইমেজ সেন্সর দেখা যায়। সিসিডি ও সিএমওএস নামের সেন্সরে সিএমওএস সেন্সরে কম ব্যাটারি খরচ হয়।
- ডিজিটাল ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, ছবির মানও তত ভালো হবে-এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ছবির আকার নির্ধারণ করে দেয় মেগাপিক্সেল। একটি ৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে ৪ x ৬ ইঞ্চি আকারের একটি ছবি তোলা যায়। ১০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় ১৩ x ১৯ ইঞ্চি আকারের ছবি তোলা যায়।
ডিজিটাল ক্যামেরার মূল্য তালিকা
ডিএসএলআরের মূল্য তালিকা
অ্যাকশান ক্যামেরার মূল্য তালিকা
মিররলেস ক্যামেরার মূল্য তালিকা
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: January 10, 2020