স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। প্রযুক্তির সিংহভাগই যেন এই স্মার্টফোনের দখলে। কিছুদিন আগেও মোবাইলফোন বলতে আমরা শুধুমাত্র কথা বলা যায় এরকম একটি যন্ত্র চিনতাম। কিন্তু এখন যেন এই মোবাইলফোন ছোট-খাট একটা কম্পিউটারই হয়ে গেছে। আশেপাশে এতো এতো স্মার্টফোন দেখে হয়তো আপনার মনে হচ্ছে আপনারও এখন একটা স্মার্টফোন দরকার। স্মার্টফোন কেনার পূর্বে জেনে নিন এর কিছু সাধারন ফিচার সম্পর্কে।
স্মার্টফোনের বর্তমান বাজারমূল্য দেখতে এই লিঙ্ক-এ ক্লিক করুন।
ডিসপ্লেঃ স্মার্টফোন এর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ডিসপ্লে। বর্তমানে ৩" থেকে শুরু করে ৬" মাপের স্মার্টফোন ও বাজারে পাওয়া যায়। দাম অনুসারে এগুলার মানও ভিন্নরকম হয়। স্মার্টফোন এর ডিসপ্লে টিএফটি, আইপিএস, অ্যামোলেড, সুপার অ্যামোলেড, রেটিনা মানের হয়।
টিএফটিঃ টিএফটি শব্দের পূর্ণরূপ হল 'থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টার'। এ প্রযুক্তিতে দুটি গ্লাসের মাঝে লিকুইড থাকে। টিএফটি ডিসপ্লে সম্বলিত মোবাইলে ব্যাটারি বেশি ব্যায় হয়। তাছাড়া টিএফটি ডিসপ্লেতে সূর্যের আলোয় কিছুই দেখা যায় না।
আইপিএসঃ আইপিএস শব্দের পূর্ণরূপ হল 'ইন প্লেন সুইচিং। আইপিএস ডিসপ্লে টিএফটি এর তুলনায় অধিক উন্নত এবং রেজুলেসন ৬৪০ x ৯৬০। এই প্রযুক্তির ডিসপ্লেতে ব্যাটারির চার্জ কম খরচ হয়।
অ্যামোলেডঃ অ্যামোলেড শব্দের পূর্ণরূপ হল অ্যাকটিভ মেট্রিক্স অরগানিক লাইট-ইমিটিং ডায়োড। অ্যামোলেড ডিসপ্লে অধিক উজ্জ্বল এবং হালকা ওজনের হয়ে থাকে। এ প্রযুক্তিতে ব্যাটারির শক্তি কম খরচ হয়। এ প্রযুক্তিতে জৈব পদার্থ ব্যাবহার করা হয়। ফলে অন্যান্য ডিসপ্লে প্রযুক্তি থেকে এটি বেশি আলো প্রধান করে।
সুপার অ্যামোলেডঃ অ্যামোলেড ডিসপ্লে আবিস্কারের পর স্যামসাঙ এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। এটি অ্যামোলেড ডিসপ্লে অপেক্ষা অধিক উজ্জ্বল।
রেটিনাঃ রেটিনা ডিসপ্লের উদ্ভাবক হল অ্যাপল। অ্যাপল তাদের আইফোন, আইপ্যাড, আইপড ইত্যাদি ডিভাইস এ এই প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যাবহার করে থাকে। রেটিনা ডিসপ্লের পিক্সেল বেশি থাকে। তাই এটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয়।
গরিলা গ্লাসঃ গরিলা গ্লাস হল একধরনের মজবুত গ্লাস যা স্মার্টফোনের ডিসপ্লেকে আঁচড় ও দাগ থেকে রক্ষা করে।
সিপিইউঃ সিপিইউ বলতে স্মার্টফোনের প্রসেসরকে বোঝায়। সিঙ্গেলকোর থেকে শুরু করে অক্টাকোর প্রসেসরের স্মার্টফোন আছে বাজারে। প্রসেসর যত ভাল হবে মোবাইলের কাজের মান তত ভাল হবে। স্মার্টফোনের প্রসেসর সাধারণত ডুয়েল কোর, কোয়াড কোর, অক্টা কোরের হয়ে থাকে। ডুয়েল কোর প্রসেসর এর কাজের মান যতটুকু, কোয়াড কোর প্রসেসরের কাজের মান তার থেকে আরেকটু ভালো। আবার কোয়াড কোর এর কাজের মান অপেক্ষা অক্টা কোর প্রসেসরের কাজের মান আরেকটু উন্নত।
র্যামঃ র্যাম মূলত কাজের গতি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ৫১২ মেগাবাইট থেকে শুরু করে ৩ গিগাবাইট র্যাম এরও স্মার্টফোন রয়েছে বাজারে। র্যাম এর পরিমান যত বেশি হবে কাজের গতিও তত ভাল থাকবে। তাছাড়া মোবাইল-এ এইচডি গেমিং করতে র্যাম এর বিকল্প নেই। তাই র্যাম এর পরিমান একটু বেশি এরকম স্মার্টফোন কেনার চেষ্টা করুন।
মেমোরিঃ স্মার্টফোনের ইন্টারনাল মেমোরি যত বেশি তত ভাল। তাছাড়া যারা গেমিং এর জন্য স্মার্টফোন কিনতে আগ্রহী তাদের জন্য ইন্টারনাল মেমোরি বেশি হওয়া দরকার। কারণ অনেক বড় বড় গেম আছে যেগুলো ইন্টারনাল মেমোরিতে ফাইল রেখে খেলতে হয়। এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায় যে ইন্টারনাল মেমোরি ৮ জিবি হলেও ইউজেবল থাকে ৫ জিবি কিংবা ৪ জিবি। এক্ষেত্রে আপনার স্মার্টফোনের ইউজেবল মেমোরি কত দেখে নিন। এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড কত জিবি পর্যন্ত সাপোর্ট করে এটাও দেখে নিন। এতে করে প্রয়োজনে আপনি আলাদা মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
ক্যামেরাঃ স্মার্টফোন এখন ডিজিটাল ক্যামেরার বিকল্প হয়ে গেছে। ২ মেগাপিক্সেল থেকে শুরু করে ৪১ মেগাপিক্সেল মানের ক্যামেরাযুক্ত ফোনও পাওয়া যায়। তবে ভালো মানের ছবির নিশ্চয়তা ক্যামেরার মেগাপিক্সেল এর উপর নির্ভর করে না।ছবির রং, উজ্জলতা এবং আকর্ষণীও ভাব নির্ভর করে ক্যামেরার লেন্স এর উপর। একটু ভালো করে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন যে একটি ব্রান্ডের ফোনের ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় যে ছবি উঠে, তা একটি নন-ব্রান্ড ফোনের ২০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়েও তোলা যায় না। সুতরাং শুধুমাত্র ক্যামেরার মেগাপিক্সেল দেখে আকৃষ্ট না হয়ে এর লেন্স এর কার্যক্রমটাও ভালো ভাবে পরখ করে নিন। একটু ভালোমানের ক্যামেরাযুক্ত ফোন কিনে সেটি দিয়ে আপনি অনায়াসে ক্যামেরার কাজ চালিয়ে দিতে পারবেন। সাথে সাথে যদি ফ্রন্টক্যামেরা থাকে তাহলে আপনি ভিডিওকলিং সুবিধাও ভোগ করতে পারবেন।
সেন্সরঃ স্মার্টফোন এ বিভিন্ন রকম সেন্সর অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন প্রক্সিমিটি, কম্পাস, বেরোমিটার, হল সেন্সর, লাইট সেন্সর ইত্যাদি। এগুলো আপনার স্মার্টফোন-এ উন্নতমানের গেম খেলার সময় সাহায্য করবে। এছাড়াও হল সেন্সর এর মাধ্যমে আপনি বিশেষ একটি ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। আর তা হল একটি বিশেষ ফ্লিপ কভার ব্যাবহারের মাধ্যমে আপনার ফোনে অটোলক এবং অটোআনলক সিস্টেম ব্যাবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার ফোনের কভারের উপরের পর্দা খুললেই অটোমেটিক লাইট জ্বলে যাবে। পাওয়ার বাটন চাপার কোনো প্রয়োজন পড়বে না। এবং কাজ শেষে কভার বন্ধ করলে আপনাআপনি লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও স্মার্টফোনে লাইট সেন্সর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ফোনের অটোমেটিক ব্রাইটনেস কন্ট্রোল করে। অটোমেটিক ব্রাইটনেস হল আপনার আশেপাশের আলো বিবেচনা করে ফোন নিজে নিজেই তার ব্রাইটনেস কমিয়ে বা বাড়িয়ে নেয়।
ব্যাটারিঃ স্মার্টফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্যাটারি। আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির মিলি এম্পিয়ার যত বেশি হবে তত ভালো। কেননা স্মার্টফোন ব্যাবহার এর সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তবে অনেক সময় ব্যাটারির মিলি এম্পিয়ার বেশি থাকা সত্ত্বেও ফোনের ব্যাটারি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তাই স্মার্টফোন কেনার পূর্বেই নিশ্চিত হয়ে নিন যে ব্যাটারিটি অন্তত এক থেকে দেড় দিন ব্যাকআপ দেয়। নতুবা আপনাকে প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ বার ফোনে চার্জ দিতে হবে যা খুবই বিরক্তিকর একটি ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।
অন্যান্যঃ ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, ইউএসবি এবং এনএফসি সংযোগ আছে কিনা দেখে নিন। ওয়াই-ফাই ব্যাবহারের মাধ্যমে আপনি সিমছাড়া ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারবেন। ব্লুটুথ ব্যাবহার করে আপনি অন্য ডিভাইস এর সাথে বিভিন্ন ধরনের ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। আর ইউএসবি কেব্ল এর মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটার এর সাথে ফাইল শেয়ার করতে পারবেন।
স্মার্টফোনের বর্তমান বাজারমূল্য দেখতে এই লিঙ্ক-এ ক্লিক করুন।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: May 28, 2018