ব্যস্তময় পৃথিবীতে সময়ের মূল্য অনেক। প্রতিযোগীতার এই যুগে প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য মূল্যবান। আর তাই প্রত্যেক মুহূর্তের হিসাব নির্ভুলভাবে রাখা আমাদের জন্য অনেক জরুরী। কিন্তু আমাদের ব্যবহৃত ঘড়ি আদৌ কি সময়ের নির্ভূল হিসেব রাখতে সক্ষম ? এক গবেষনায় জানা যায়,আমাদের প্রাত্যহিক ঘড়ি দীর্ঘ দিন ব্যবহার করার কারনে বিভিন্ন ভাবে ক্ষয়ে যায় এবং অচিরেই এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সময়ের তারতম্য ঘটে ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এটি হয়তো ক্ষুদ্রভাবে তেমন কিছু না; কিন্তু সামগ্রিক ও বৃহৎভাবে এই ক্ষতি ব্যাপক। বিশেষ করে মহাকাশ ও আলো সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াবলীতে এই কারনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সকল সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে মৌলিক পদার্থের পারমানুর হতে তৈরি এক ধরনের বিশেষ ঘড়ি। একে বলা হয় " পারমানবিক ঘড়ি (Atomic clock)। সম্প্রতি আরো নির্ভূল সময়ের হিসেব রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভুল ও শক্তিশালী পারমানবিক ঘড়ি তৈরির দাবি করেছে। জানা যায়, নব্য তৈরি করা এই পারমানবিক ঘড়িটির স্পন্দন অন্য যে কোন পারমানবিক ঘড়ির তুলনায় অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং একটি অপরটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শুধু তাই নয়, এর প্রতিটি স্পন্দন জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারের সূত্রসমূহও অনুসরন করে। বর্তমানে ব্যবহৃত অন্য যেকোন ঘড়ির তুলনায় এই ঘড়িটি ১০ গুণ বেশি নির্ভুল ও শক্তিশালী। এই পারমানবিক ঘড়িটি তৈরি করতে " ইটারবিয়াম (Ytterbium) " নামক এক ধরনের বিশেষ পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে আরো জানা যায়, সময়ের নির্ভূল হিসাব রাখা ছাড়াও ঘড়িটির সহায়তায় বিমান ও নৌচালনা, বাৎসরিক হিসাব, মাধ্যাকর্ষন, তড়িৎ চৌম্বকক্ষেত্র, আলোর গতি এবং তাপমাত্রা ও আবহাওয়া নির্ণয়-সংক্রান্ত কাজসহ প্রযুক্তিবিষয়ক আরো বিভিন্ন কাজ করা যাবে। এই গবেষনার সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি' এর পদার্থবিদ অ্যান্ড্রু ল্যুডলো জানান, শুধু নির্ভুল সময় নির্ণয় নয় বরং এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘড়িটি প্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। একই সাথে অনেক দূরহ সমস্যার সমাধানও করা যাবে। নির্ভুল সময়ের হিসাব রাখার জন্য পারমানবিক ঘড়ির ব্যবহার শুরু হয় বিংশ শতাব্দির প্রায় মাঝামাঝি সময়ে। তারপর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত এই বিষয়ে ব্যাপক গবেষনা ও খোঁজ চলতে থাকে। " দ্য সায়েন্স " নামক প্রখ্যাত ইংরেজী সাময়িকীতে প্রকাশিত ঘড়ি বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্ল্যেখ করা হয়েছে, সময়ের পরিমাপ ঠিক রাখার জন্য সাধারন যান্ত্রিক ঘড়ি মেট্রোনাম বা পেন্ডুলামের স্পন্দন বা দোলন ব্যবহার করে। কিন্তু পারমাণবিক ঘড়িতে এর পরিবর্তে তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র এবং আলোর গতি ও সংকেতকে কাজে লাগায়।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: November 16, 2013