বিশ্বের উষ্ণতা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। আর সেই সাথে বাড়ছে প্রকৃতির ভয়াবহ দাবদাহ। অসহনীয় গরমে কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস দিতে জার্মানির কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা সংক্ষেপে কেআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট প্রকৌশলী ভিলহেল্ম স্টর্ক উদ্ভাবন করলেন আশ্চর্যজনক এক জ্যাকেট। জার্মান এই বিজ্ঞানীর চমৎকার জ্যাকেটটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রচন্ড গরমে এটি শরীর শীতল রাখবে। শুধু তাই নয়, শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রাখে এই চমকদার জ্যাকেটটি। ভিলহেল্ম স্টর্ক তার এই অত্যাশ্চর্য শীত-তাপ নিয়ন্ত্রিত জ্যাকেটটির নাম দিয়েছেন ক্লিমাজ্যাক। এটি দেখতে কিছুটা বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের মতো। তবে এর ওজন মাত্র ২০০ গ্রাম। জ্যাকেটেটিতে একটি হাত ঘড়ি সংযুক্ত করা হয়েছে, যার সাথে ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ আছে। জ্যাকেটের ভেতরে কয়েকটি ধাতব নল, যা এই যন্ত্রাংশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। জ্যাকেটের সামনে ও পেছনে দুটো ছোট ফ্যান আছে, যা ভ্যান্টিলেশন ও কুলারের কাজ করে। এ ফ্যানগুলো চালিত হয় যন্ত্রাংশের সাহায্যে৷ গরম বা পরিশ্রমের কারণে শরীর ঘেমে গেলে এই ফ্যানগুলো সেই ঘাম শুকিয়ে ফেলবে, আর ঐ ঠান্ডা বাতাসকে নলগুলো পুরো শরীরে ছড়িয়ে দেবে৷ এছাড়াও স্টর্ক জ্যাকেটের জন্য সেন্সরসহ একটি চেস্ট-স্ট্র্যাপ আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন, যার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া এবং শারীরিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। জ্যাকেটের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ফ্যানগুলো কাজ করার সময় শব্দ হয়। তাছাড়া এটি কতটুকু উষ্ণতায় কাজ করবে তাও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। তবে স্টর্ক জানিয়েছেন তিনি এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এবং খুব দ্রুতই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। বিশেষজ্ঞ মহলে এই নব্য আবিষ্কৃত জ্যাকটটি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। তাদের মতে, একটি ঘরকে শীতল করতে যেখানে ২ কিলো ওয়াটের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, সেখানে ক্লিমাজ্যাক তৈরি করতে প্রয়োজন মাত্র ২ ওয়াট বিদ্যুতের এবং এটি পরিবেশবান্ধবও। স্টর্ক জানান, গরমের দিনে পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেদের শীতল রাখতে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের নীচে এই জ্যাকেটটি অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারবেন৷ শুধু তাই নয় , ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা অগ্নি নির্বাপনের জন্য তাদের প্রচলিত ভারী জ্যাকেটের পরিবর্তে এই জ্যাকেটটি ব্যাবহার করতে পারবেন। এতে করে প্রচন্ড গরমেও তাদের শরীর শীতল থাকবে। সম্প্রতি জার্মানির শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয় স্টর্কের এই ক্লিমাজ্যাকের জন্য কয়েক লাখ ইউরো খরচ করতে রাজি হয়েছেন৷ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের আরেকটি লক্ষ্য হৃদরোগীরা, গরমে যাদের হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে যায়৷ এই জ্যাকেটের ফলে তাদের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা৷ তবে কবে নাগাদ জ্যাকেটটি বাণিজ্যিকভাবে আসবে এবং এর দাম কেমন হতে পারে তা এখনও জানানো হয় নি।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: August 31, 2013