বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত একটি নাম হলো রাঙামাটি। চট্টগ্রাম বিভাগের পুর্বাংশে এটির অবস্থান। চট্টগ্রাম শহরের পুর্বদিকে মাত্র ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট পাহাড়ী শহর রাঙামাটি। কাপ্তাই লেকের পাশ ঘেসে পাহাড় আর সবুজের সমারোহে রাঙামাটি শহর গড়ে উঠেছে নিজস্ব স্বকীয়তায়।
খুব ছোট আর ছিমছাম শহর রাঙামাটি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই উপজাতি। দেশের সবচে উপজাতি চাকমাদের বাস এই শহরে। চাকমা ছাড়াও টিপরা, মারমা, লুসাই, কুকি, মগ ইত্যাদি উপজাতিদের বাসও এখানে। পাহাড়ি জীবনে অভ্যস্থ আর ভীষণ পরিশ্রমী মানুষগুলো কিন্তু বেশ অতিথি পরায়ণ। পাহাড়ি আদিবাসীদের শহর রাঙামাটির অপরুপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই একবার হলেও ওখান থেকে ঘুরে আসতে হবে। ইট পাথরের শহর আর যান্ত্রিক জীবনের একঘেইয়েমি থেকে মুক্তি পেতে বেড়িয়ে আসতে পারেন এই ছোট্ট শহর থেকে!!
রাঙামাটি শহরের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে-
উপজাতীয় যাদুঘরঃ রাঙামাটি শহরেই রয়েছে এই যাদুঘরটি। এটি খুব বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান। এখানে রয়েছে পাহাড়ি আদিবাসীদের হস্তশিল্পের নিজস্ব ভান্ডার। যাদুঘরটিতে রয়েছে তাঁতের বস্ত্র, বাঁশের বাঁশি, পুরাতন মুদ্রা, মেয়েদের নেকলেস সহ হাতে বানানো অলংকার, বাঘের ফাঁদ (খাঁচা) সহ আরো অনেক কিছু। একটু সময় নিয়ে যাদুঘরটি ঘুরে এসে নিজেকে সমৃদ্ধ করার একটা সুযোগ তো আপনি নিতেই পারেন।
কাপ্তাই লেক: কেউ যদি দুইদিন সময় নিয়ে রাঙামাটি আসেন, তাকে অবশ্যই একদিন সময় হাতে রাখতে হবে কাপ্তাই লেক ঘুরে আসার জন্য। রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকা ঠিক করে লেকটাকে একবার ঘুযরে আসা যায়। প্রতি ২০ জন যাত্রীর জন্য একটা বড়
নৌকার ভাড়া পরবে ২০০০ টাকা, আর প্রতি ১০ জনের জন্য সেটা ১০০০ টাকা। লেকের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় ঘুরে নির্মল আনন্দ পাওয়া যায় আর লেকের চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য তো রয়েছেই আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য!!
ঝুলন্ত সেতু: সাধারণত রাঙামাটি গিয়ে এই সেতুটি না দেখে কেউ ফেরত আসেন না। কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই সেতুটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্পট। আপনিও চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান: কর্ণফুলি নদি আর কাপ্তাই রেঞ্জের পাশেই এই উদ্যানটির অবস্থান। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, হাতি, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সহ নানা রকম প্রাণী। এইখানে বেশকয়টি পিকনিক স্পটসহ কিছু রেস্ট হাউস রয়েছে। সরকারী হিসেব মতে প্রতি বছর ৫০০০০ লোক এই উদ্যানটি ঘুরতে আসেন।
পিডা টিং টিং: রাঙামাটি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই লেকের মধ্যে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপ এটি। এই জায়গাটি সবচে বিখ্যাত তার প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য। এইখানে একটা ছোট রিসোর্ট ছাড়াও স্থানীয় লোকজন দ্বারা পরিচালিত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। একসাথে ঘুরাও হয় আবার ঘুরতে গিয়ে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া যায়।
চাকমা রাজবাড়ি: চাকমা রাজাদের বাসস্থান এই রাজবাড়ি। যদিও এটা বাজার বাসভবন, তবুও এটা সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
শুভলং ঝর্ণা: রাঙামাটি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বরকল উপজেলায় এই ঝর্ণার অবস্থান। এখানে বেশ কিছু ছোট ছোট ঝর্ণা রয়েছে। সবচে বড় ঝর্ণাটিতে প্রায় ৩০০ ফুট উপর থেকে পানির প্রবাহ বিদ্যমান। বিগত কয়েক বছরে এটিও খুব বিখ্যাত স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
হোটেল ও রিসোর্ট: রাঙামাটি শহরে খুব উন্নত মানে আবাসিক হোটেল পাওয়া যায় না। তবে মোটামুটি মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। বনরূপা ট্যুরিস্ট ইন. এ একটি বড় রুমের ভাড়া পড়বে ১৪০০ টাকা, হোটেল সুফিয়াতে ১১০০, মোটেল জর্জে ৬০০ টাকা । বনরূপা ট্যুরিস্ট ইন. এর অবস্থান চম্পকনগরে, হোটেল সুফিয়া কাঁঠালতলি আর মোটেল জর্জ কলেজ গেইটে। এগুলি ছাড়াও বেশ কিছু কমদামি হোটেলও রয়েছে।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে রাঙামাটি সরাসরি যাবার কোন ব্যাবস্থা নেই। চট্টগ্রাম নেমে ওখান থেকে বাসে করে যেতে হয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের মধ্যে রয়েছে মহানগর প্রভাতী, গোধূলী, তূর্ণা নিশিথা। যাওয়ার এক সপ্তাহ আগেই টিকেট কেটে রাখতে হয়। আবার কেউ চাইলে বাসে করেও যেতে পারেন। শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম সহ আরো বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গাতেই এইসব বাসের কাউন্টার রয়েছে। চট্টগ্রামে নেমে সিএনজি তে করে অক্সিজেন মোড়ে গেলেই রাঙামাটিগামী বাস পাওয়া যায়। তবে সকালের দিকে অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙামাটিমুখি বিআরটিসি এর বাস পাওয়া যায়, এটাই রাঙামাটি যাওয়ার সবচে ভালো উপায়।
যাওয়ার উৎকৃষ্ট সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী, এই কয়টা মাস রাঙামাটি ঘুরতে যাবার সবচে ভালো সময়। এই সময় ওখানকার তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে, যা ঘুরে বেড়ানোর সহায়ক।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: July 19, 2013