পাহাড়ের কোলে সবুজময় শতবর্ষী চা-বাগান, হাওড়ের বিস্তির্ণ জলরাশি, বৃষ্টিস্নাত ঘন বন; শ্রীমঙ্গলের বর্ণনা দেয়ার জন্য এই-ই যথেষ্ট। জলাভূমি, পাহাড় (তবে শ্রীমঙ্গলের পাহাড়গুলোকে পাহাড় না বলে টিলা বলাই শ্রেয় কেননা এদের উচ্চতা খুব বেশি নয়), ঘন বনাঞ্চলের এত অসাধারণ সমন্বয় দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। সাজানো গোছানো চা-বাগানের অবস্থানের কারনে অনেকে শ্রীমঙ্গলকে দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ির দেশও বলে থাকেন। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা হচ্ছে শ্রীমঙ্গল; জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই এলাকাটি দেশের সবচেয়ে বৃষ্টিপাত প্রবণ স্থান; একারনেই এই উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত চা-বাগান, আরও আছে দেশের একমাত্র রেইন ফরেস্ট বা বর্ষাবন লাউয়াছড়া। প্রকৃতি যেন পরম যত্নে শ্রীমঙ্গলকে সাজিয়েছে; তাইতো প্রকৃতি ও ভ্রমণপিয়াসু মানুষদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল। উপভোগ করার মত অনেকগুলো স্থান রয়েছে শ্রীমঙ্গল ও তার আশেপাশের এলাকায়। হাতে দু-তিনদিন সময় নিয়ে চলে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল; কথা দিচ্ছি হতাশ হবেন না।
ট্যুর প্যাকেজের মূল্য তালিকা
দর্শনীয় স্থানসমূহ:
চা-বাগান:
শ্রীমঙ্গলে সাধারণ ভ্রমনার্থীদের জন্য চা-বাগানই মনে হয় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ছোট-বড় মিলিয়ে এই উপজেলায় চা-বাগান আছে ৩৮টি যার মাঝে অনেকগুলোই আছে শতবর্ষ অতিক্রম করা। বাণিজ্যিক ভাবে এই অঞ্চলে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয় প্রায় দেড়শ বছর আগে, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় সর্বপ্রথম চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়; পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য স্থানে এর চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত অধিকাংশ চা-বাগানই ব্যাক্তি মালিকানায় গড়ে তোলা যার মাঝে ইস্পাহানি ও ফিনলে টি এস্টেটের নাম কারও অজানা নয়। সবুজে ঘেরা এই শহর থেকে অল্প কিছুদূর হাটলেই অপনার চোখে পড়বে টিলার পর টিলায় সবুজ কার্পেট সদৃশ চা-বাগান। চা-বাগানের ভেতর আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে কিছুক্ষণ হাটলেই আপনার শরীর-মন জুড়িয়ে যাবে। তবে বাগানে প্রবেশের আগে কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে ভুলবেন না। চা-শ্রমিকদের পাতা সংগ্রহের দৃশ্য মনে থাকার মত। সাধারণত গাছের উপরের দিকের কুঁড়িসহ দুটি পাতা সংগ্রহ করা হয়। পুরানো চা-বাগান গুলোর একেকটি চা গাছের বয়স প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর, তবে উচ্চতা আড়াই-তিন ফুটের বেশি নয়; পাতা সংগ্রহের সুবিধার জন্যই গাছগুলো ছেঁটে রাখা হয়। শ্রীমঙ্গল শহরের নিকটেই রয়েছে ভাড়াউড়া, বুড়বুড়িয়া সহ বেশ কয়েকটি বড় চা-বাগান। এছাড়াও কিছু দূরেই রয়েছে সিন্দুরখান, কালীঘাট, রাজঘাট, ফুলছড়া, কাকিয়ছড়া চা-বাগান।
চা-যাদুঘর:
বাংলাদেশে চায়ের বিভিন্ন জাত, চা-চাষ সম্পর্কিত নানা উপাদান ও চা চাষের দেড়শ বছর পার হওয়া ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গলের টি-রিসোর্টে স্বল্প পরিসরে টি-বোর্ডের উদ্যেগে গড়ে তোলা হয়েছে একটি চা-যাদুঘর। এখানে আসলে দেখতে পাবেন ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিশেষ কয়েন, রাজনগর চা বাগানের নিজস্ব কয়েন, বাগান লাগোয়া ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাবপত্র, ব্রিটিশ আমলের ফিল্টার, চা গাছের মোড়া-টেবিল, প্রোনিং দা, প্লান্টিং হো, রিং কোদাল ইত্যাদি। তবে যাদুঘরটির সংগ্রহ সমৃদ্ধ করার কাজ এখনও চলছে।
বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই):
১৯৫৭ সালে পশ্চিমা ঢঙে গড়ে তোলা বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট বা বিটিআরআই চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে; হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এই বিটিআরআই কমপ্লেক্স। বিটিআরআই কমপ্লেক্সের চারপাশের চা বাগান, চা নার্সারী, চা পরীক্ষাগার, চা প্রকৃয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট, শতবর্ষী চা গাছ, আরব ও রোবাস্টা কফি গাছ, অফিসার্স কাবের পেছনের হ্রদ; অর্কিড ও ভেষজ বাগান আপনাকে নিশ্চিত ভাবেই মুগ্ধ করবে।
ডিনস্টন সিমেট্রি:
শ্রীমঙ্গলে ভ্রমনের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি স্থান হচ্ছে শতবছর পুরানো ডিনস্টন সিমেট্রি যা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে রাজঘাট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত খেজুরীছড়ায় ফিনলে টি কোম্পানির চা বাগান অবস্থিত। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশরা শ্রীমঙ্গলে এসে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ আরম্ভ করে। এখানে কাজ করতে এসে বিভিন্ন সময় যেসব ব্রিটিশ নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন তাদের সমাহিত করা হয় খেজুরীছড়ার এই ডিনস্টন সিমেট্রিতে। চা বাগানের মাঝে গড়ে তোলা অসাধারণ সাজানো-গোছানো এই সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ৪৬ জন বিদেশী নাগরিক।
সুন্দরবন ট্যুর প্যাকেজের মূল্য তালিকা
নির্মাই শিববাড়ী:
চর্তুদশ শতাব্দীতে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা অঞ্চলে ত্রিপুরার মহারাজা রাজত্ব করতনে। প্রবল শক্তশালী এ রাজার বিরুদ্ধে কুকি সামন্তরাজা প্রায়ই বিদ্রোহ ঘোষণা করতনে। কুকি রাজার বিদ্রোহ দমন করতে ত্রিপুরার মহারাজা সৈন্য পাঠান এবং তুমুল এ যুদ্ধে কুকিরা পরাজিত হলেও মহারাজার প্রধান সেনাপতি রণক্ষেত্রে নিহত হন আর এই সেনাপতি ছিলেন রাজার জামাতা। ফলে স্বামীহারা হন মহারাজা কন্যা নির্মাই। ভারতর্বষে তখন সহমরণ প্রথা চালু ছিল কিন্তু রাজকন্যা সহমরণে রাজি না হয়ে স্বামী নিহত হওয়ার স্থানে এসে শিবের আরাধনা করতে থাকেন এবং সিদ্ধি লাভ করেন। তাই রাজকণ্যার নামে ১৪৫৪ খ্রীস্টাব্দে শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা পরগণার শঙ্করসেনা গ্রামে নির্মাই শিববাড়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক এই স্থানটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি অন্যতম র্তীথস্থানে পরিণত হয়। এখানে শিবমন্দিরের পাশেই রয়েছে ৯ একর জায়গা জুড়ে বিশাল দিঘী। দিঘীর চারপাশে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতীর বৃক্ষ। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৫ কিমি দূরত্বের পথ পাড়ি দিয়ে যেতে পারবেন ঐতিহাসিক নির্মাই শিববাড়ীতে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান:
আমাদের দেশের একমাত্র রেইনফরেস্ট লাউয়াছড়া দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে শ্রীমঙ্গলের পাশ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জে। চারপাশে চা বাগান দেখতে দেখতে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক ধরে ৯ কিমি গেলেই পৌঁছে যাবেন চিরহরিৎ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ১২৫০ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট জীববৈচিত্রে ভরপুর এই বনাঞ্চলকে ১৯৭৪ সালে সংরক্ষিত এবং ১৯৯৭ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষনা করে বাংলাদেশ সরকার। উদ্যানের উঁচু-নিচু টিলায় বেড়ে ওঠা ১৬৭ প্রজাতির অসংখ্যা সুউচ্চ বৃক্ষ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। এই বনে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে গাছগুলো খুব উঁচু হয়ে থাকে এবং ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত তৈরি করে ফলে বনের মাটিতে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বললেই চলে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই বনটি কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট কেননা ১৯২৫ সালে তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষরোপন করে, আর আজ সেই গাছগুলোই মহীরুহে পরিনত হয়েছে। এই বনে বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি চিত্তাকর্ষক; জীববৈচিত্রের দিক থেকে বনটি দেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। বনের একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই বৃক্ষের মগডালে দেখতে পেতে পাবেন বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের ও বিভিন্ন প্রজাতির বানরের লাফালাফি। ভাগ্যভালো থাকলে চোখে পড়তে পারে ভাল্লুক, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, খাটাশ, নানা প্রজাতির সাপ, হরিণ, বন মোরগ ইত্যাদি। এছাড়াও এই বনে আছে ২৪৬ অধিক প্রজাতির পাখি, অজগরসহ ৬ প্রজাতির সরিসৃপ, বন্য কুকুর, মুখপোড়া হনুমান, শিয়াল, সবুজ কোকিল, কয়েক প্রজাতির পেঁচা, বাজপাখি, ঈগল ইত্যাদি। পুরো বন জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেকগুলো পাহাড়ি ছড়া। ভোর বেলায় বনে প্রবেশ করলে অসংখ্যা পাখপাখারির কিচিরমিচির ও উল্লুকের ডাকে আপনি বিমোহিত হবেন। তবে বনে প্রবেশের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন; কখনোই বনের পরিবেশ নষ্ট করবেন না অর্থাৎ ময়লা ফেলা, বন্যপ্রণীর প্রতি ক্ষতিকর আচরণ, গাছপালা নষ্ট, অকারণ শব্দ সৃষ্টি ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবেন।
সিতেশরঞ্জন দেবের মিনি চিড়িয়াখানা:
একসময়কার সাহসী শিকারী ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার সিতেশরঞ্জন দেব, তার পিতাও তৎকালীন নামকরা শিকারী ছিলেন। পরবর্তীতে শিকার বাদ দিয়ে বন্যপ্রণী সংরক্ষক হয়ে ওঠেন সিতেশরঞ্জন; পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে শিকারে অনুৎসাহিত করে বন্যপ্রণী সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার ব্রত নেন। ধীরে ধীরে সারাদেশে বন্যপ্রণী প্রেমী হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন। ১৯৭২ সালে শ্রীমঙ্গলের মিশন রোডে সিতেশরঞ্জনের পিতা সিরিশরঞ্জনদেব গড়ে তোলেন একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। পিতার মৃত্যুর পর সিতেশরঞ্জন নিজেই চিড়িয়াখানাটির দেখভাল শুরু করেন। বর্তমানে চিড়িয়াখানাটির অবস্থান শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়ায় সিতেশরঞ্জন দেবের খামার বাড়ীতে। সময় নিয়ে দেখে আসতে পারেন তার প্রাণী সংগ্রহশালাটি। যদিও কিছুদিন আগে চিড়িয়াখানাটি অবৈধভাবে প্রাণী সংগ্রহের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলো। বর্তমানে তিনি সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আহত বা পথহারা প্রাণীদের সেবা শুশ্রুষা করার জন্য চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসেন এবং সুস্থ হওয়ার পর বনে অবমুক্ত করেন। তার সংগ্রহে বেশকিছু দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রয়েছে, যেমন: মেছো বাঘ, বিরল আলবিনো বাঘ (সাদা বাঘ), সোনালী বাঘ, ভাল্লুক, গন্ধগোকুল, সজারু, খাটাশ, বনরুই, উড়ুক্কু কাটবিড়ালী, সাইবেরিয়ান লেজ্জা লামবার্ড, লজ্জাবতী বানর, ইন্ডিয়ান সোনালী বানর, মায়া হরিণ, চিত্রাহরিণ, সোনলী কচ্ছপ, বন্য খরগোশ ইত্যাদি; সরীসৃপ এর মধ্যে রয়েছে গুইসাপ, অজগর ইত্যাদি; রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, যেমন: ধনেশ, পাহাড়ী ময়না, লক্ষণ টিয়া, হেমালিয়ান টিয়া, সবুজ ঘুঘু, বন্যমথুরা, বনমোরগ, সরালী, কালিম, তিতির, শঙ্খচিল, হরিয়াল, শিশিবক ইত্যাদি।
হাইল হাওর:
শ্রীমঙ্গল চা বাগান, পাহাড়-টিলা ও বনাঞ্চলের পাশাপাশি হাওরের জন্যও বিখ্যাত; হ্রদ বা লেককে স্থানীয়ভাবে হাওর বলা হয়। নানা প্রজাতির পাখির ও মাছের আবাসস্থল হিসেবে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি হচ্ছে হাইল হাওর। এই বিশাল হাওরটি প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাণবৈচিত্রে ভরপুর, তাই স্থানীয় অনেক মানুষের জীবন জীবিকার যোগান দিচ্ছে হাওরটি। স্থানীয়দেও কাছে লতাপাতার হাওর নামে পরিচিত কেননা এখানে প্রচুর লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছ জন্মে। হাইল হাওরের আসল সৌন্দর্য্য হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি; অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করায় বার মাসই এলাকাটি পাখির কলতানে মুখর থাকে আর শীতকালে পরিযায়ী পাখি তো আছেই। বর্ষায় এই হাওরের বিস্তির্ণ জলরাশি দেখে আপনার মনে হবে চারপাশে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই; হাইল হাওরের এই পানির উৎস গোপলা নদী। হাওরজুড়ে জেলেদের মৎস্য আহরণের দৃশ্যও মনে রাখার মত। চাইলে একটি নৌকা ভাড়া করে সারাদিনের জন্য হাওরটি ঘুরে দেখতে পারেন কেননা সকাল থেকে সন্ধ্যা একেক সময় হাওর একেক রুপ ধারণ করে; ভোরে মনে হবে পুরো হাওর জেগে উঠেছে আর সন্ধ্যায় মনে হবে পাখির রাজ্যে প্রবেশ করেছেন।
কক্সবাজার ট্যুর প্যাকেজের মূল্য তালিকা
বাইক্কা বিল:
শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত হাইল হাওরের একটি অংশ হচ্ছে বাইক্কা বিল। মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলা সংরক্ষিত এই বিলের সৌন্দর্য্য যেন স্বপ্নময়। বাইক্কা বিলে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার পার হয়ে বরুণা-হাজিপুর রাস্তা দিয়ে হাজিপুর বাজার চলে যাবেন; সেখান থেকে ৩/৪ কিমি পায়ে হেটে বা মোটরসাইকেলে চেপে বাইক্কা বিল। হাজিপুর বাজার থেকে চাইলে গাইডও নিয়ে নিতে পারেন। বিলটিকে হাইল হাওরের প্রাণ বলা যেতে পারে কেননা এই অংশটিই পর্যটকদের ভ্রমণকে পরিপূর্ণ করে তোলে। পাখির কলতানে সারাদিনই বিলটি জীবন্ত থাকে আর তাই পাখি দেখার জন্য এখানে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ওয়াচটাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে; দূরবিন দিয়ে পাখি দেখার সুযোগও পাবেন এখানে। বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন দেশীয় মাছ যেমন: কালবাউশ, গইন্না, আইড়, চিতল, গুলশা, পাবদাসহ প্রায় ১৫/২০ প্রজাতির মাছ সরক্ষণ করা হচ্ছে বিলটিতে এবং ফলাফলও আশাব্যাঞ্জক। এছাড়াও বাইক্কা বিলে মাখনা, শালুকসহ বেশকিছু জলজ ফল পাওয়া যায়; আরও আছে বিল ভর্তি শাপলা ও পদ্ম। বর্তমানে ইউএসএইড এর অর্থয়নে বিলের পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ চলছে।
মনিপুরী পাড়া:
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম বড় গোষ্ঠী হলো মনিপুরী আদিবাসি। আমাদের দেশে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া; হবিগঞ্জের চুনারুঘাট; সুনামগঞ্জের ছাতকে মনিপুরী আদিবাসীদের বসবাস রয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্দ অংশ হচ্ছে মনিপুরী নৃত্য ও মনিপুরী তাঁত। যদিও সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব, কাঁচামালের দুস্প্রাপ্যতা ইত্যাদি কারনে মনিপুরী তাঁত শিল্প অনেকটা ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে, তারপরও অনেক মনিপুরী পরিবার সযত্নে শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছে। শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায় এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াসে বেশ কটি তাঁতে তৈরী হচ্ছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না, ব্যাগসহ নানা ধরনের পণ্য। তাঁত শিল্প সম্পর্কে জানতে এবং তাঁতে কাপড় বুনার প্রক্রিয়া দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায়। মনিপুরীদের আতিথেয়তা গ্রহন করতে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিক্সাযোগে সহজেই যেতে পারেন মনিপুরী পাড়াতে। তবে বাংলাসনের কার্তিক মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে মনিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাসোৎসব দেখতে চাইলে যেতে পারেন কমলগঞ্জের মাধবপুরস্থ জোড়ামন্ডপ অথবা আদমপুরস্থ মনিপুরী শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে।
খাসিয়া পানপুঞ্জি :
সিলেট বিভাগে মোট ৭৫টি খাসিয়া পানপুঞ্জি রয়েছে যার মধ্যে শ্রীমঙ্গলে দশটির অবস্থান। আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায় দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় উঁচু পাহাড়ি টিলা পরিস্কার করে পান চাষ করে থাকে আর এসব পান চাষ এলাকাই পুঞ্জি নামে পরিচিত। প্রতিটি পানপুঞ্জিতে ২৫/৩০টি পরিবার গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করে। খাসিয়ারা পাহাড়ি পতিত ভূমিতে সুউচ্চ গাছের পাশে লতানো পানের চারা রোপন করে। রোপনকৃত এ চারা অল্পদিনেই বড় গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায়। টিলার পর টিলা সুউচ্চ গাছগুলো সবুজ পান পাতায় ঢেকে থাকে আর বড় গাছে লতানো পান গাছের এই দৃশ্য অত্যন্ত নয়নাভিরাম। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা বাঁশের তৈরি এক প্রকার মই ব্যবহার করে গাছ থেকে পান সংগ্রহ করে। সে পান খাসিয়া নারীরা গুছিয়ে খাচায় ভরে। এই দৃশ্য দেখতে চাইলে চলে যান নাহার, নিরালা, চলিতাছড়া, লাউয়াছড়া প্রভৃতি পান পুঞ্জিতে। এসব পুঞ্জিতে প্রতিদিনই সকাল-বিকেল পান ক্রেতাদের জীপ গাড়ি যাতায়াত করে। আপনি এদের সাথে ভাড়া দরদাম করে চলে যেতে পারবেন যে কোন পুঞ্জিতে। আদিবাসিদের সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করবেন এবং ছবি তোলার আগে অনুমতি নিয়ে নিবেন।
মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ :
১৯৯৭ সালের ১৪ জুন গভীর রাতে এ গ্যাসকূপে ড্রিলিংয়ের সময় অগ্নিবিস্ফোরণে আশপাশের খাসিয়া পুঞ্জি, চা-বাগান, রেললাইন, সবুজ বনাঞ্চল সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই গ্যাসকূপটি এখন পরিত্যক্ত এবং সংরক্ষিত এলাকা। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। গত ১১ বছর ধরে এ এলাকাটিতে আবার সজীবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে বন বিভাগ। প্রকৃতিও নিজরুপ ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আগুনে পোড়া গাছগুলো এখনও কালের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মাগুরছড়ায়। দর্শনার্থীরা এ এলাকায় বেড়াতে এসে অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করে মাগুরছড়ার দৃশ্যাবলি।
আনারস বাগান :
দেশের সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপন্ন হয় এই শ্রীমঙ্গলে, তাই শ্রীমঙ্গলকে অনেকে আনারসের রাজধানীও বলে থাকেন। এই আনারস সারাদেশ জুড়েই বিখ্যাত কেননা স্বাদে-গন্ধে এ আনারস অতুলনীয়। শ্রীমঙ্গলে ভ্রমনে আসার পর যদি হাতে সময় থাকে তাহলে শহর থেকে গাড়ি বা মোটরসাইকেলে চেপে চলে যান মোহাজেরাবাদ, বিষামনি, পিচের মুখ বা সাতগাঁও পাহাড়ে। আনারস বাগান এলাকায় পৌঁছার সাথে সাথেই নাকে আসবে পাকা আনারসের সুমিষ্ট গন্ধ। ভোরে এসব এলাকায় গেলে দেখতে পাবেন শত শত শ্রমিক বাগানের টাটকা আনারস পেড়ে ঠেলাগাড়িতে সাজিয়ে রাখছে। সাজনো গোছানো আনারস বাগানের এই সৌন্দর্য্য কোন অংশে চা বাগানের চেয়ে কম যায় না।
সিলেট ট্যুর প্যাকেজের মূল্য তালিকা
রাবার বাগান :
বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বশিউক) রাবার বিভাগ সিলেট জোন শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। এ বিভাগের অধিনে রয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মোট ৪টি রাবার বাগান। শ্রীমঙ্গলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সাতগাঁও রাবার বাগান ছাড়াও জেমস ফিনলে টি কোম্পানী ও ডানকান ব্রাদার্স এর প্রায় প্রতিটি চা বাগানে রাবার চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকাধীন অসংখ্য রাবার বাগান রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কের ভৈরববাজার নামক স্থানে রাস্তার খুব কাছেই অবস্থিত মাইজডিহী রাবার বাগান দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। আপনি ইচ্ছে করলে যে কোন রাবার বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। খুব সকালে রাবার বাগানে গেলে রাবার শ্রমিকদের রাবার কষ আহরন ও রাবার তৈরি প্রক্রিয়া দেখতে পাবেন। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রাবার গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ালে রাবার বীজের রিমঝিম শব্দে আপনি একটি ঘোরের মাঝে চলে যাবেন।
মাধবপুর হ্রদ:
শ্রীমঙ্গল ঘুরতে গেলে পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মাধবপুর হ্রদ দেখে আসতে ভুলবেন না। শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরত্বে কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ন্যাশনাল টি কোম্পানি বা এনটিসি আর এই চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে বা পাত্রখলায় মাধবপুর হ্রদের অবস্থান। চা চাষ ও প্রকৃয়াজাত করার জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয় তাই প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই কর্তৃপক্ষ একাধিক জলাধার তৈরী করে আর স্থানীয় চা শ্রমিকরা এসব জলাধারকে ডাম্প বলে থাকে। এ কারনেই এনটিসি কর্তৃপক্ষ ১৯৬৫ সালে বাগানের মধ্যস্থিত তিনটি টিলাকে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলে মাধবপুর হ্রদ। এই হ্রদটির আয়তন প্রায় ৫০ একর এবং দৈর্ঘ্যে প্রয় ৩ কিমি আর প্রস্থ স্থানভেদে ৫০ হতে ৩০০ মিটার। এই হ্রদের বুকে সারা বছরই কমবেশি ভেসে বেড়ায় নানা জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি আর শীতকালে তাদের সঙ্গী হয় পরিযায়ী পাখির দল। বেগুনী শাপলা এই হ্রদের একটি মূল আকর্ষণ, এছাড়াও আছে নীল পদ্ম, টিলার পাশজুড়ে ফুটে থাকা ভাঁট ফুল। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বাগানের টিলার নিচে লেকের পাড় ঘেঁষে হাঁটার জন্য সরু পথ করে দিয়েছে, টিলার ওপর তৈরি করেছে খড়ের তাঁবু। এখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বেশকিছু পাহাড় দেখতে পাবেন।
ভাড়াউড়া লেক:
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ২ কিমি. দূরে জেমস ফিনলে কোম্পানির চা বাগান ভাড়াউড়ায় রয়েছে একটি লেক। চা বাগানের বুকে এই লেকটির আকর্ষণ কম নয়। এখানে আছে বানর আর হনুমানের বিরচণ। শীতে দল বেঁধে আসে অতিথি পাখি। পাহাড়ের কাছাকাছি গেলেই দেখতে পাবেন একসঙ্গে অনেক বানর। লেকের স্বচ্ছ পানিতে ফুটে থাকা পদ্মের সৌন্দর্য্য আপনাকে মোহিত করবে।
হামহাম জলপ্রপাত:
একদম আনকোরা পর্যটন স্থান হিসেবে দেশের অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে মৌলভিবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার গহীন বনে অবস্থিত হামহাম জলপ্রপাত। শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে আসা পর্যটকরা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন কমলগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩৮ কি:মি: দক্ষিণ-পূর্বের রাজকান্দি ফরেস্টরেঞ্জের কুরমা বন বিটে অবস্থিত হামহাম জলপ্রপাত। মজার ব্যাপার এই জলপ্রপাতের মাত্র ২০০ফুট পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা।
জলপ্রপাতটির নামের উৎপত্তি নিয়ে কয়েকটি ধারণা প্রচলিত আছে; স্থানীয় আদিবাসীদের মাঝে জনশ্রুতি আছে যে একসময় নাকি এখানে পরীরা গোসল করতো আর আরবী ভাষায় গোসল মানে হচ্ছে হাম্মাম, তাই অনেকে বলে থাকেন হাম্মাম থেকেই বর্তমান হামহাম এসেছে। আবার স্থানীয়রা উপর থেকে পানি পতনের প্রবল শব্দকে আম আম বলে থাকে, শহুরে উচ্চারণে এটিই পরিবর্তন হয়ে হামহাম হয়েছে বলেই বেশীরভাগ মানুষ মনে করে। আবার এক সময় এই এলাকায় চিতাবাঘ পাওয়া যেত বলে স্থানীয়রা একে চিতাঝর্ণা বলেও ডাকে।
প্রপাতটির উচ্চতা নিয়েও রয়েছে মতভেদ কেননা সরকারি ভাবে বা বিশ্বাসযোগ্য কোন সংস্থা এখনও এর উচ্চতা পরিমাপ করেনি। উচ্চতা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে তার সবই পর্যটকদের অনুমান; পর্যটকরা এর উচ্চতা ১২০-১৬০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেছে; যদিও প্রপাতটির উচ্চতা ১৫০ ফুটের বেশি হবে না বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। আর প্রস্থের ক্ষেত্রে অধিকাংশই একমত আর এটি হচ্ছে ৬০ ফুট। হামহামের রয়েছে দুটি ধাপ, সর্বোচ্চ ধাপ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে মাঝখানের ধাপে আর সেখান থেকে প্রবল বেগে নিচের অগভীর খাদে।
হামহাম যাবার পথটাই সবচেয়ে উপভোগ্য আবার কষ্টসাধ্যও বটে। পথে যেতে যেতে নানা ধরণের গাছপালা দেখতে পাবেন যার মাঝে বাঁশ বাগানই বেশি; বিচিত্রজাতের বাঁশ দেখা যায় এখানে যেমন: ডলু, মুলি, মির্তিঙ্গা, কালি ইত্যাদি। এছাড়াও দেখতে পাবেন চিকরাশি, কদম, জারুল, ডুমুর, বেত ও সারি সারি বন্য কলাগাছ। মৌসুমভেদে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে প্রজাপতির রঙিণ মেলাও দেখতে পাবেন। ডুমুর ও বেত গাছের ডালে ডালে চশমাপরা হনুমানের নাচনাচি আপনাকে আনন্দ দিবে, তবে এদের জ্বালাতন অনেক সময় পীড়ার কারণ হয়। সতর্কভাবে খুঁজলে দু-চারটা সাপও চোখে পড়তে পারে। তবে বর্ষাকালে জোঁক ও মশা থেকে সাবধান; জোঁক থেকে বাচার জন্য লবণ ও সরিষার তেল এবং মশা থেকে বাচার জন্য ওডোমস নিয়ে যাবেন। হামহাম দেখার জন্য বর্ষাকালই শ্রেষ্ঠ কেননা এই সময় প্রচন্ড ব্যাপ্তিতে জলধারা নিচে গড়িয়ে পড়ে আর তা থেকে সৃষ্ট পাহাড়ী ছড়া আঁকা-বাঁকা পথ তৈরি করে বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলে।
শ্রীমঙ্গল থেকে হামহাম যেতে হলে স্থানীয় বাস, মাইক্রোবাস বা জিপে করে চলে যাবেন কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত, দূরত্ব ৩০ কি:মি: আর কমলগঞ্জ থেকে ২৫ কি:মি:। এরপর কুরমা চেকপোষ্ট থেকে ১০ কি:মি: কাঁচা রাস্তা হাটলে পৌছে যাবেন অরণ্যঘেরা চাম্পারায় চা বাগান। এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে যাবেন ৫ কি:মি: দূরের সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা পল্লী তৈলংবাড়ী কলাবন বস্তিতে। এবার এখান থেকে ৩০০-৪০০ টাকার বিনিময়ে সাথে একজন গাইড নিয়ে ২-২.৩০ ঘন্টা পাহাড়ী বিপদসংকুল রাস্তা পাড়ি দিলেই দেখতে পাবেন পরম আরাধ্য অপরুপ হামহাম জলপ্রপাত। পথে প্রায় ৬ কি:মি: পাহাড়ী টিলা ও ২ কি:মি: কর্দমাক্ত ছড়ার পানি এবং সর্বশেষ একটি উঁচু পাহাড় মোকামটিলা অতিক্রম করতে হবে। হামহাম যাওয়ার জন্য সরকারীভাবে কোন রাস্তা বা অবকাঠামো তৈরি করা হয়নি, তাই সেখানে যাওয়ার সময় সাথে খাবার-দাবার, মিনারেল ওয়াটার নিয়ে যাবেন নইলে না খেয়েই থাকতে হবে।
কোথায় থাকবেন:
শ্রীমঙ্গলের সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে হলে অন্তত ৩-৪ দিন সময় নিয়ে এলেই ভালো হয়। শ্রীমঙ্গল শহরে থাকার জন্য অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। ভালো দেখে যে কোনো একটিতে উঠতে পারেন। ভাড়া মোটামুটি সাধ্যের মাঝে। শ্রীমঙ্গল শহরের উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলো হলো,
হোটেল সন্ধ্যা, নতুন বাজার, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭১১৯৭৭০৭৬।
এলাহী প্লাজা, কলেজ রোড, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০৮৬২৬৭১৫২৫, ০১৭১১৩৯০০৩৯।
হোটেল বিরতি, চৌমুহনা, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭১২৭২২৭৭৮।
জেনারেল টুরিষ্ট হাউস, পূর্বাশা, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭১১১৫৯৭০৩।
শ্রীমঙ্গল হিলভিউ রেষ্টহাউস, ১০নং ভানুগাছ রোড, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭৩৬২৮৪১৫৬।
শ্রীমঙ্গল গেষ্টহাউস, সবুজবাগ, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০৮৬২৬৭২৮২০, ০১৭২৭২৩৭৯৮০।
গার্ডেনভিউ রেষ্টহাউস, সিরাজনগর, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৬৭০২৮৮৯৩০।
আল-রহমান, হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০৮৬২৬৭১৪৭৮, ০১৭১২৩১৭৫১৫।
হোটেল তাজমহল, সেন্ট্রাল রোড, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭১৬০৭৪৯২৬।
রেইন ফরেষ্ট রিসোর্ট, উত্তরসুর, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৯৩৮৩০৫৭০৬।
হোটেল মুক্তা, হবিগঞ্জ রোড, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০৮৬২৬৭১১৮০, ০১৭২২২৫৩৫৯৬।
হোটেল নীলিমা আবাসিক, হবিগঞ্জরোড, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭২৪৭৫৯৮৫৭।
হোটেল ইউনাইটেড, চৌমুহনা, শ্রীমঙ্গল। যোগাযোগ: ০১৭১১০৭৪৭১৯।
এছাড়াও সরকারি, আধা-সরকারি সংস্থা, চা বাগান কতৃপক্ষের বেশকিছু বাংলো রয়েছে এখানে। কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এগুলোতেও উঠতে পারেন।
হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় কয়েকজন থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিল মালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে থাকা, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোন পর্যটককে বিমোহিত করবে।
লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১টি ফরেস্ট রেস্ট হাউজ, ফরেস্টের রেঞ্জের অনুমতি নিয়ে আপনি লাউয়াছড়া রেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন।
টি টাউন রেস্টহাউজ: শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ রোডে রয়েছে এসি, নন এসি ও গাড়ী পার্কিং এর সুবিধাসহ টি টাউন রেস্টহাউজ। যোগাযোগ:০৮৬২৬৭১০৬৫, ০১৭১৮৩১৬২০২।
ট্যুর প্যাকেজের মূল্য তালিকা