কুমির একটি সরীসৃপ প্রাণী। ইউরোপ ছারা এটি প্রায় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পাওয়া যায়। মোটামুটি ১৭.৫ কোটি বছর আগে কুমিরের উৎপত্তি এবং এটি জীব বৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পৃথিবীতে মোট ২৩ প্রজাতির কুমির আছে। যেহেতু কুমির খুবই আক্রমণাত্মক ও হিংস্র প্রাণী সেহেতু বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন একটি বিস্ময়কর ঘটনা। র্যাপটাইল ফার্ম লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করে। ফার্মটি ২০০৩ সালে ১৫ একর জমি নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় গড়ে উঠে। ২০০৪ সালে ফার্মটি ১.১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মালয়েশিয়া থেকে মোট ৭৫টি কুমির আমদানি করে। এই কুমিরগুলো সল্ট ওয়াটার কুমির নামেও পরিচিত। ৬/৭ ফুট গভীরতার মোট ৩২টি পুকুরে কুমিরগুলোকে রাখা হয়েছে।
প্রজনন
সাধারণত বর্ষাকালে কুমির বংশবৃদ্ধি করে থাকে। প্রজননের ৭ দিন পরে কুমির ডিম দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি স্ত্রী কুমির ২০ থেকে ৮০টি বাচ্চা দিতে পারে। সাধারণত দিনের বেলায় কুমির ডিম পাড়েনা। রাতের বেলায় এগুলো ডিম পাড়ে। কুমিরগুলো বিচরণস্থলে ডিম পাড়ে। মাটি, পাতা এবং অন্যান্য গাছপালা দিয়ে তারা বাসা বাঁধে। মা কুমির বাসাটিকে নিরাপদে রাখে। বাহ্যিক পরিবেশ যখন প্রতিকূল থাকে তখন মা কুমির ডিমগুলো নষ্ট করে দেয়। অণ্ডস্ফুটনের জন্য ফার্মটিতে অতি আধুনিক কৃত্রিম অণ্ডস্ফুটন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৮০-৮২ দিন রাখার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের
হয়। বাচ্চা কুমিরগুলোকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত চেম্বারের লালনপালন করা হয়। বাচ্চা কুমিরগুলো মানুষের গন্ধে খুবই সংবেদনশীল হয়ে থাকে। প্রতিদিন খাবার সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট ২ জন লোক লাগে। এই নির্দিষ্ট লোক পরিবর্তন হলে এরা খাওয়া বন্ধ করে দিবে এবং মারা যাবে। ১ বছর বয়সি কুমিরের দৈনিক খাবার হতে হবে তার দেহের ওজনের ২০ শতাংশ। বাচ্চা কুমিরগুলোকে খাবার হিসেবে গরুর কিমা ও হাঁস
দেয়া হয়। প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরগুলোকে গরুর মাংস, হাঁসের মাংস ও মাছ দেয়া হয়। এগুলোকে সপ্তাহে ১ বার তাদের দেহের ওজনের ২০ শতাংশ খাবার দেয়া হয়।
রোগ-বালাই
যথাযথ ব্যবস্থাপনায় রাখলে কুমিরের রোগ হয়না। ছোট কুমিরে মাঝেমাঝে ছত্রাকজনিত রোগ হয়। কিন্তু এই ফার্মে এখন পর্যন্ত এই রোগ ধরা পরেনি।
ব্যবসায়িক চাহিদা
১ সেন্টিমিটার কুমিরের চামড়ার দাম ২০-৩৫ ইউএস ডলার। আন্তর্জাতিক খোলা বাজারে প্রতি কেজি প্রক্রিয়াজাত কুমিরের মাংসের দাম ২০০ ইউএস ডলার। কুমিরের চামড়া বেল্ট ও ব্যাগ বানাতে ব্যবহৃত হয়। এর হাড় ব্যবহৃত হয় পেরফিউম উৎপাদনে। দাত ব্যবহৃত হয় অলঙ্কার তৈরিতে এবং নখর ব্যবহৃত হয় চাবির রিং তৈরিতে।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: January 15, 2017