আপনি ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু বুঝতে পারছেন না যে কোথা থেকে শুরু করবেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই।
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এমন যে অধিকাংশ মানুষ তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুজে পায়না। অনেকেই এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন যে কারও অধীনে কাজ করার চেয়ে নিজেরাই নিজেদের পছন্দমত কাজ তৈরি করে নেয়াটা সর্বোত্তম। কারণ এ ধরনের কাজ মূলত ব্যক্তির ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা এবং জিবনের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রচেষ্টা, একটি নির্দিষ্ট লিখিত উদ্দেশ্য এবং তার গঠনপ্রণালী।
উদ্যোক্তা হওয়ার বিশেষ কোনও মুহূর্ত নেই, নেই কোনও কাল। একজন ব্যক্তি যেকোনো সময় নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। উদ্যোক্তা হওয়ার নানা কৌশল আছে। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কৌশল বর্ণনা করা হোলঃ-
১. নিজের অবস্থান নির্ণয়ঃ আপনি যদি আপনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করুন। দেশের অর্থনীতি, নিজের বস, বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার-পরিজন্দের উপর দোষ নিয়ে কোনও লাভ নেই। পরিবর্তন তখনি আসবে যখন আপনি সজ্ঞানে পরিবর্তন চাবেন এবং সেই অনুযায়ী কোনও সিদ্ধান্ত নিবেন।
২. উপযুক্ত ব্যবসা শনাক্তকরণঃ নিজেকে অন্বেষণ করার সুযোগ দিন। নিজের চরিত্রের বিভিন্ন দিক, স্বজ্ঞা(অনুভুতি) এবং সামাজিক ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি আরোপ করাটা জরুরী। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন “কোন জিনিসটা বা কোন কাজটা আমাকে শক্তি / কর্মশক্তি দান করে যখন আমি ক্লান্ত থাকি।” কারণ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ওই কাজটিকেই বেছে নিতে বলেছেন যে কাজটি করলে খেলা মনেহয় এবং সময়ের কোনও হিসাব থাকেনা। কোন ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত যা বোঝার ৩টি উপায় আছে
- আপনি যা জানেন প্রথমে তাই কাজে লাগান। অতীতে নিজের এবং অন্যান্য মানুষের জন্য আপনি কি কি করেছেন সেগুলো খুঁজে বের করেন এবং চিন্তা করেন কিভাবে সেগুলোকে গুণগুলোকে প্যাকেজ করে সেবা হিসেবে প্রদান করা যায়।
- অন্যদের যেসব ব্যবসা আপনাকে আকর্ষণ করে, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- মানুষের চাহিদা সম্পর্কে জানুন।
- প্রত্যেকটি পণ্যের বাজারেই নতুন কিছু না কিছু যোগ করা সম্ভব। সেই ফাঁকটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। তাছাড়া চিন্তার এক পর্যায়ে আপনি নতুন কোনও পণ্যের ধারনাও পেতে যেতে পারেন।
- এসব কিছু করার আগে নিজেকে শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করুন এবং নিজের ও অন্যের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ থেকে কিছু শিখার চেষ্টা করুন।
৩. পরিকল্পনাঃ অধিকাংশ মানুষের ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে পরিপূর্ণ পরিকল্পনার অভাব। তাই একটি পরিকল্পনা দার করান। এটি আপনাকে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিবে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। পরিকল্পনাটি খাতায় লিখুন। আপনার উদ্দেশ্য, কৌশল এবং পদক্ষেপগুলো পরিকল্পনার অংশ। পরিকল্পনাটি ১ পেজের বেশি হওয়ারও প্রয়োজন নেই। নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেন
- আমি কি বানাচ্ছি?
- কাদের জন্য বানাচ্ছি?
- নিজেকে ও ক্রেতাকে কি ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি?
- লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য, কৌশল এবং কর্ম পরিকল্পনা কি?
৪. নির্ধারিত ক্রেতা নির্ণয়ঃ কোনও টাকা খরচ করার আগে ক্রেতাদের চাহিদা নির্ণয় করুন। আপনার পণ্য আদও তারা ক্রয় করবে কিনা তা খুঁতিয়ে দেখুন। আপনার নির্ধারিত বাজারের আয়তন নির্ণয় করুন। আপনার পণ্য ক্রেতারা কেনও ক্রয় করবে তা ঠিক করুন। তারপর বাজারের উপর প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালান। এতে করে আপনি ক্রেতার মানসিকতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
৫. অর্থায়নঃ উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং ব্যবসা পরস্পর সংযুক্ত। নিজের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার বিশদ বিবরণ তৈরি করুন এবং প্রত্যেকটি আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখুন। বাইরের তহবিল জোগাড় করার আগে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। অনাবশ্যক খরচ কমান এবং প্রত্যেকটি টাকার উপযুক্ত ব্যবহার করুন।
৬. সাপ্লাই নেটওয়ার্ক তৈরিকরণঃ যেহেতু আপনি আপনার ব্যবসায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সেহেতু পৃষ্ঠপোষক গ্রুপ, পরামর্শক, অংশীদার, মিত্র এবং নানান বিক্রেতার সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। আপনি যদি নিজের ব্যবসায় বিশ্বাসী হন, তাহলে অন্যরাও হবে। ইভেন্ট গ্রুপে উপস্থিত থাকাকালে অন্যদের ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন এবং আপনি কিভাবে তাদেরকে সাহায্য করতে পারেন, তা জানার চেষ্টা করুন। বিনয়ী হওয়ার এবং নির্দ্বিধায় অন্যদের সাহায্য করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিনয়ী স্বভাব আপনাকে অগ্রদূত হিসেবে গঠন করতে সাহায্য করবে।
৭. মানোন্নয়নঃ সেবাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করুন। আপনি যতো বেশি সেবা দিতে সক্ষম হবেন ততো বেশি আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন যে
- আপনি তাদের মানসম্মত কি দিতে পারেন?
- পণ্য ক্রয়ের দ্বারা কিভাবে ক্রেতাদের পরিতৃপ্ত করতে পারেন?
- ক্রেতার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত মানোন্নয়ন সম্ভব কি?
৮. প্রকাশ্যে শেয়ার করুনঃ আপনি কি এবং জীবন ধারনের জন্য কি করেন তা কোনও দ্বিধা ছাড়া প্রকাশ করুন। যেকোনো কার্যকর মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, সাফল্য ও ব্যর্থতা এই ২টি মিলেই ব্যবসা। প্রথমবার সফলতা নাও আসতে পারে, তাই বলে এই না যে কখনও সফলতা আসবেনা। বিখ্যাত লেখক ও প্রভাষক ন্যাপোলিয়ান হিল বলেছিলেন যে ৮০% উদ্যোক্তার ব্যর্থ হওয়ার কারণ হচ্ছে হার মেনে নেয়া।
একটি শিশু বার বার পরে যাওয়ার পরেই হাটতে শিখে। ব্যর্থতা থেকেই উপযুক্ত শিক্ষা পাওয়া যায়। তাই ব্যর্থতাকে সহজভাবে নিন। মনে রাখবেন, এই ব্যর্থতা অস্থায়ী। ধারাবাহিকভাবে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে এই ব্যর্থতা অতিক্রম করা সম্ভব। এজন্য চাই মানসিক শক্তি ও ধৈর্য। পৃথিবীতে যারা উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছেন, তাদের ওই অবস্থানের পিছনে রয়েছে হাজারো ব্যর্থতা এবং সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: October 24, 2016