bdstall.com

হাবল টেলিস্কোপ

হাবল মহাকাশে পৃথিবীর প্রথম টেলিস্কোপ। ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল শাটল মিশন STS-31 এর সাহায্যে স্পেস শাটল ডিসকভারি দিয়ে এই টেলিস্কোপকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৫৯৬ কিলোমিটার উঁচুতে এর কক্ষপথে পাঠানো হয়েছিল। বিজ্ঞানী এ্যাডউইন পি. হাবল-এর নামানুসারে এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নামকরন করা হয়েছিল। বিজ্ঞানী হাবলই সর্বপ্রথম মহাজগতের বস্তুগুলোর ব্লু-শিফ্‌ট এবং রেড-শিফ্‌ট দেখিয়ে প্রমান করেছিলেন যে আমাদের এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল, প্রতিটি বস্তুই একটি অপরটির থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে।

 

পৃথিবী থেকেই হাবল টেলিস্কোপটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার এবং স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সটিটিউট।আয়নার প্রতিফলনে দূরবর্তী বস্তুর তথ্য ধারন করতে পারে এটি। অর্থাৎ এটি একটি প্রতিফলন টেলিস্কোপ। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ। এই চন্দ্র টেলিস্কোপের ক্ষমতা খুবই বেশি। প্রায় দেড় মাইল দুরের দেড় ইঞ্চি সাইজের কোন লেখাও এর সাহায্যে পড়া যায়। ঘণ্টায় ২৮,২০০ কিলোমিটার গতিতে প্রতি ৯৭ মিনিতে হাবল পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। ২৫ ফুট লম্বা দুটি সৌরপ্যানেলের সাহায্যে সূর্য থেকে হাবল টেলিস্কোপ তার প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহন করে। ছয়টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারির সাহায্যে শক্তি সঞ্চয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে হাবল পৃথিবীতে ১২০ গিগাবাইট তথ্য পাঠায় এবং ম্যাগনেটো-অপটিক্যাল ডিস্কে এই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়। মহাবিশ্বের বয়স কিংবা কৃষ্ণশক্তির বিষয়গুলো জানা গেছে তার পাঠানো তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করেই।

 

হাবলে আছে ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ যেটি অতিবেগুনী রশ্মির কাছাকাছি রশ্মি, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি এবং ইনফ্রারেডের কাছাকাছি রশ্মি দেখতে পারে। এছাড়াও এর কস্‌মিক অরিজিন স্পেকট্রোস্কোপ অতিবেগুনীরশ্মিতে দেখতে পারে। এটা প্রিযমের মতো আলোকে ভাগ করে। যার ফলে এর দ্বারা দৃশ্যমান বস্তুর তাপমাত্রা,  ঘনত্ব, রাসায়নিক মিশ্রণ আর গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর অ্যাডভান্সড ক্যামেরা ফর সারফেস দৃশ্যমান আলো দেখতে পারে। মহাবিশ্বের প্রথম দিককার দৃশ্যগুলো ধারণ করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ডার্কম্যাটার, গ্যালাক্সির চাকতি, মহাবিশ্বের দূ-রবর্তি বস্তু ইত্যাদি গবেষণায়ও ব্যবহার করা হয়। এর স্পেস টেলিস্কোপ ইমেজিং স্পেকট্রোস্কোপ অতিবেগুনী, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি আর ইনফ্রারেডের কাছাকাছি আলো দেখতে সক্ষম, এবং এই যন্ত্রটি কৃষ্ণগহ্বর অনুসন্ধানে বেশ ভালো কাজ করে। তাপ পরিমাপক যন্ত্র নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা অ্যান্ড মাল্টি-অবজেক্ট স্পেকট্রোমিটার এর সাহায্যে লুকায়িত বস্তুর অনুসন্ধান করা হয়, আর দূরবর্তি আকাশে দৃষ্টি দেয়া হয়। এর ফাইন গাইড্যান্স সেন্সর একে গাইড স্টার বা ধ্রুব তারা চিহ্নিত করে হাবলকে সেদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাক করে থাকতে সাহায্য করে। দুটো তারার মধ্যকার দূরত্ব আর তাদের আনুপাতিক গতি পরিমাপও করা যায়।

 

টেলিস্কোপটি নাসার হলেও পৃথিবীর যেকোনো বিজ্ঞানী নাসার অনুমতিতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিবছর এরকম ২০০টি আবেদন গ্রহণ করা হয় এবং নাসা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই দিকের ছবি তোলে সেই আবেদনকারীর নিকট পাঠায়। 

এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: August 29, 2016
Reviews (0) Write a Review