বাংলাদেশে সবচেয়ে ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে লালবাগের কেল্লা অন্যতম। পর্যটকদের জন্য লালবাগ কেল্লা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শনের স্থান। চারু ও কারুকলা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে এটি মানুশের মনে বিস্ময় জাগায়। লালবাগের কেল্লা পুরনো ঢাকার লালাবাগে অবস্থিত। যদিও সময়ের ব্যবধানে কেল্লাটি জীর্ণ হয়েছে তবুও এখনও তার সমৃদ্ধ ইতিহাস দ্বারা সজ্জিত আছে। মুঘল আমলে, বিশেষভাবে প্রিন্স মোহাম্মদ আযম কর্তৃক ১৬৭৮ সাল এ নির্মিত হয়। কেল্লাটিকে মূলত ঔরঙ্গাবাদ ফোর্ট(কেল্লা) বলা হয়েছিল। কিন্তু ‘লালবাগের কেল্লা’ নামটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পায় কারন কেল্লাটির কাঠামো ছিল লাল রঙের।
লালবাগের কেল্লা ৩টি ভবনের সমন্বয়ে গঠিত।
১। মসজিদ (পশ্চিম দিকে)
২। পরি-বিবির সমাধি (কেল্লার পূর্ব-পশ্চিমের মাঝখানে)
৩। দিওয়ান-ই-আম প্রাসাদ (পূর্ব দিকে)
মসজিদটি ওই সময়ে প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করা হতো এবং এখনও হচ্ছে। মসজিদটির সুন্দর কাঠামো এবং কুশলী কাজ হচ্ছে রাজকীয় শিল্পের প্রতীক যা যেকোনো মানুষকে অভিভূত করবে। অনেক ইসলামী শিল্প ও প্রাচীর ডিজাইন এখানে সংরক্ষিত আছে।
পরি-বিবির সমাধি শায়েস্তা খান নকশা করেন। তিনি সেখানে মার্বেল পাথর, টাইলস, ফুল-পাতার কুশলী-কারুশিল্প আনেন। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থান যার নিচে সুসজ্জিত ৯টি ঘর রয়েছে। ছাদ কালো পাথর দিয়ে তৈরি। সমাধির উপরের গম্বুজটি খাঁটি তামা দ্বারা আবৃত। এই সুন্দর ২০.২ মিটার সমাধি ১৬৮৮ সালে উদ্বোধন করা হয়।
দিওয়ান-ই-আম লালবাগ কেল্লার সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ। এটি সেই সময়ে অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। দিওয়ান-ই-আম এমন একটি স্থান যেখান থেকে মুঘল শাসক সপ্তাহে ১ বার সাধারণ জনগণকে দিকনির্দেশনা দিত। এখানে একটি রাজকিয় বাথরুম আছে যা হাম্মাম নামে পরিচিত।
কেল্লাতে প্রবেশের জন্য ৩টি প্রবেশদ্বার আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হচ্ছে দক্ষিণের প্রবেশদ্বার এবং যে কেও এটি বুড়িগঙ্গা থেকে দেকতে পারে। এটি ৩ তলা বিশিষ্ট কাঠামো। কিন্তু মাঝখানের গঠন মিনার দ্বারা আচ্ছাদিত। তাই এর কাঠামো দেক্তে ২ তলা মনেহয়।
এসব ছাড়াও লালবাগ কেল্লাতে রাজকীয় বাগান ও জলনির্গমন-প্রণালী আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এই ঐতিহাসিক স্থানটির দায়িত্ব ভার নিয়েছে। লালাগ কেল্লা ঢাকার একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। প্রায় ৩ ৩০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর এই ঐতিহাসিক জায়গাটি ঘুরতে আসে।
লালবাগ কেল্লায় প্রবেশের ফি
- স্থানীয় পর্যটক ২০ টাকা
- সার্ক ভুক্ত দেশের পর্যটক ১০০ টাকা
- অন্যান্য ২০০ টাকা
খোলা থাকার সময়
গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল – সেপ্টেম্বর)
- মঙ্গলবার - শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ও দুপুর ১.৩০ থেকে ৬টা পর্যন্ত।
- শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২.৩০ ও দুপুর ২.৩০ থেকে ৬টা পর্যন্ত।
- রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি
- সোমবার দুপুর ২.৩০ থেকে ৬টা পর্যন্ত।
শীতকাল (অক্টোবর – মার্চ)
- মঙ্গলবার - শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১.৩০ থেকে ৫টা পর্যন্ত।
- শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২.৩০ ও দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত।
- রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি
- সোমবার ১.৩০ থেকে ৫টা পর্যন্ত।
লালবাগ কেল্লা ঈদের দিন, ঈদের আগের দিন এবং যেকোনো সরকারি ছুতির দিনে বন্ধ থাকে এবং রমযান মাসে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: December 31, 2015