আজ আমরা মঙ্গল, চাঁদ, সূর্যসহ পৃথিবীর বাইরের অনেক কঠিন রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি। চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে পৃথিবীর মানুষ। অথচ ৫১ কোটি ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এই পৃথিবীতে এখনও অনেক রহস্যময় স্থান আছে যার রহস্য উদ্ধার হয়নি। তার মধ্যে একটি হল আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গকিলোমিটার। জায়গাটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজের মত। তাই নামের শেষে ট্রায়াঙ্গেল কথাটি যুক্ত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, পুয়ের্টো রিকো এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ এই তিনটি অংশের ভিতরেই এর অবস্থান।
এই অঞ্চলের রহস্যের মূল কারণ হল এখানে কোনো জাহাজ বা উড়োজাহাজ একবার প্রবেশ করার পরপরই বেতার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, দিক নির্দেশক কম্পাস উল্টা-পাল্টা নির্দেশনা দিতে থাকে। একসময় জাহাজটি বা উড়োজাহাজটি অদৃশ্য হয়ে যায়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে অনেক নাবিক তাদের অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন। ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম ১৪৯২ সালে এই বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তাঁর মতে তাঁর জাহাজের নবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আকাশে ধোঁয়া এবং আলোর নাচানাচি দেখেছিলেন এছাড়াও কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও লিখেছিলেন তিনি।
১৯৬২ সালে আমেরিকান লিজান ম্যগাজিনে ফ্লাইট নাইনটিনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই ফ্লাইটের দলপতি বলেছিলেন "We don't know where we are, the water is green, no white." অর্থাৎ "আমরা জানিনা আমরা কোথায় আছি, সবুজ রঙের পানি, কোথায় কিছু সাদা নেই।" এরপর এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে পৃথিবীর অনেক বই, ম্যাগাজিন এবং পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে।
১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টিভিএম আভেঞ্জার টর্পেডো পাঁচটি বোমারু বিমানের একটি, যেটি প্রশিক্ষণ চলাকালে আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়। বিমানটি আর ফিরে আসেনি। নেভি তদন্তকারীরা নেভিগেশন ভুলের কারনে বিমানের জ্বালানীশূন্যতাকে বিমান নিখোজের কারণ বলে চিহ্নিত করে। তবে আশ্চর্যের কারণ হল বিমানটি অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের জন্য পাঠানো বিমানের মধ্যে একটি বিমান পিবিএম ম্যারিনার ১৩ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়ে যায়। এ পর্যন্ত এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অসংখ্য বিমান এবং জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার কোনটিরই ধ্বংসাবশেষেরও কোনো হদীস মেলেনি। অনেক গবেষকই এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যের সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন। দেখা যাক কখনও এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের সমাধান করা যায় কিনা। নাকি চিরদিনই অমীমাংসিতই থেকে যাবে এই রহস্য?
এই প্রবন্ধটি পোস্ট করা হয়েছে: April 22, 2015